১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনেই সমাবেশ, আসবে ‘আসল ঘোষণা’: ফখরুল

“আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে, সেদিন থেকে শুরু হবে একদফার আন্দোলন,” বললেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 02:33 PM
Updated : 22 Nov 2022, 02:33 PM

আসছে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সরকারের ‘গড়িমসির’ মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, “করতে দেওয়া হবে না ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ। এটা কারও বাপের রাজত্ব নাকি? কারো বাপের রাজত্ব? ১০ তারিখে এইখানেই সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা।”

ফখরুল বলেন, “আজকে সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। তাদের সমস্ত দুর্নীতি, তাদের আত্মম্ভরিতা, তাদের অহংকার- সবকিছু দিয়ে এদেশের মানুষকে তারা জিম্মি করে ফেলেছে। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, ওরা হচ্ছে মালিক আর আমরা হচ্ছি- চাকর-বাকর-প্রজা, এদেশের মানুষ তাদের প্রজা।”

ঢাকায় ‘শান্তিপূর্ণ’ সমাবেশ হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা অনেক আগে বলেছি (অনুমতি চেয়ে চিঠি)। আমরা আইন মেনেছি, আমরা আইন মেনে চলতে চাই, আমরা চিঠি দিয়েছি। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। আমাদের দাবিও পরিষ্কার।

“আমরা বলেছি- জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে; আমরা বলেছি- চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে; আমরা বলেছি- আমাদের ভাই, শাওন, নূরে আলম, আব্দুর রহিম, আবদুল আলিম ও নয়ন হত্যার প্রতিবাদে আমরা এই সমাবেশ করব। আমরা বলেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আমাদের এই সমাবেশ।”

‘১০ তারিখে একদফার ঘোষণা’

মির্জা ফখরুল বলেন, “এখনও তো আসল ঘোষণাটা দেই-ই নাই। আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে। সেদিন থেকে শুরু হবে একদফার আন্দোলন।”

ফখরুল এ সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্লোগান তোলেন, শেখ হাসিনাকে ‘বিদায় করাই’ তাদের একমাত্র দাবি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এখানে (দাবি আদায়ে) কোনো কম্প্রমাইজ নাই, এখানে কোনো আপস নাই। যেতে হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান।”

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমরা বারবার করে বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চলেছি। সাতটি বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করেছি আমরা। গাড়ি বন্ধ করে দেয়, বাস-ট্রাক বন্ধ করে দেয়, লেগুনা বন্ধ করে দেয়; তাতে কি সমাবেশ বন্ধ করতে পারছে? পারে নাই। মানুষ জোয়ারের মতো এসেছে।

“তিন ঘণ্টার সমাবেশকে তোমরা তিনদিন বানাইছো। তিন দিন ধরে মানুষ তোমাদের পিণ্ডি চটকাইছে।”

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ‘পুলিশের গুলিতে’ ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

গত ১৯ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুরের মোল্লাবাড়ি এলাকায় ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় কুমিল্লার বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে লিফলেট বিতরণকালে ওই ঘটনা ঘটে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকার আমাদের জীবন নিয়ে খেলছে, আমাদের দেশ নিয়ে খেলছে, আমাদের ছেলেদের হত্যা করা হচ্ছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়তে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, সকলকে একসঙ্গে জেগে উঠতে হবে।

“এমনি এমনি কেউ সরে না। সরাতে হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে পরাস্ত করতে হবে।”

নয়নের মৃত্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

“আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, পত্রিকায় এসেছে যে, বাঞ্ছারামপুরের ঘটনা সাজানো ঘটনা। এরা কত অমানুষ হতে পারে, কত নির্মম, অমানবিক হতে পারে যে দুঃখ পর্যন্ত প্রকাশ করে না। আরে সাজানো নায়ক তো তোমরা, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বন্দুক-পিস্তলের জোরে ক্ষমতায় বসে আছ।”

‘জনগণের প্রতিপক্ষ হবেন না’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা সবাই সমাবেশের সামনে চারদিকে দাঁড়িয়ে আছেন…। আমি তাদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই যে, তারা এদেশের সন্তান। এদেশের প্রতিটি মানুষ তাদের ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে এদেশের সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন নেয়…।

“আপনাদের কাঁধে বন্দুকটা রেখে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আজকে যে অবৈধ অন্যায়-বেআইনি অমানবিক শাসন চালিয়ে যাচ্ছে, তার দায় কিন্তু এসে পড়ে আপনাদের কাঁধে।”

প্রশাসনের কেউ যাতে জনগণের প্রতিপক্ষ না হয়, সেই আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে‌ র‌্যাবকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া কি র‌্যাবের গুম করার অধিকার আছে? একইভাবে বাঞ্ছারামপুরে যে পুলিশ ভাই গুলি করেছে, তাকে নির্দেশ দিয়েছে বলে সে গুলি করেছে। এই নির্দেশদাতা কে? শেখ হাসিনা।

“আবারও বলি- আমরা নিষেধাজ্ঞা চাই না। অন্য রাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আমাদের জন্য লজ্জাকর, অপমানের। এই লজ্জা ও অপমানের জন্য দায়ী হচ্ছে এই শেখ হাসিনার সরকার। আমরা চাই না, অন্য কোনো বাহিনী আবার নিষেধাজ্ঞায় পড়ুক। তাই স্পষ্ট করে বলছি, জনগণের প্রতিপক্ষ কেউ হবেন না, জনগণকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না। এই জনগণ এই দেশের মালিক।”

‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব বলেন, “বিভাগীয় সমাবেশগুলোর পর মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। ঢাকায় এখনও সমাবেশ হয়নি। এখনই মিথ্যা মামলা শুরু হয়ে গেছে।

“আরে মামলা দিয়ে কি আটকানো গেছে? ১৫ বছর আটকানো গেছে। যতো মামলা দেবে, ততো আন্দোলন শক্তিশালী হবে; মানুষ আরও রুখে দাঁড়াবে। আমি বলে দিতে চাই, বাধা দিলে বাধবে লড়াই।”

সবাইকে আন্দোলনের জন্য ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নেওয়ার আহ্বানও জানান ফখরুল।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান,  কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা হলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজী আহসান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, লিটন মাহমুদ, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি।