বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে ডাকাই হয়নি, ফাঁদের প্রশ্ন কেন: কাদের

“রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে আসবে, এটি বিএনপির গণতান্ত্রিক অধিকার, সুযোগ নয়। সরকার তাদের প্রতি কোনো দয়া প্রকাশ করছে না”, বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 09:02 AM
Updated : 10 May 2023, 09:02 AM

নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘অনাগ্রহ’ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা বিএনপিকে এ বিষয়ে প্রস্তাবই দেননি।

সরকার বিএনপিকে ‘ফাঁদে ফেলতে চায়’ বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য রেখেছেন, তার জবাব দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, তারা কোনো ফাঁদে ফেলছেন তা কাউকে।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক কর্মশালা শেষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তর সংক্রান্ত বৈঠক ও সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে এই কর্মশালা হয়। পরে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ নেতার কাছে প্রশ্ন রাখেন নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে।

কাদের বলেন, “বিএনপিকে সংলাপ এবং নির্বাচনকালীন সরকারে ডাকা হয়নি। এখানে প্রলোভনের ফাঁদের প্রশ্ন আসে কেন?

“রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপির গণতান্ত্রিক অধিকার, সুযোগ নয়। আওয়ামী লীগ কেন তাদের অনুগ্রহ করবে? ডেকে আনবে। আওয়ামী লীগ তাদের কোন ফাঁদে ফেলছে না।”

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কী কথা

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় আওয়ামী লীগ। দলটি চাইলে ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পেতে পারত।

তবে বিএনপি সে সময় এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ভোট বর্জনের পাশাপাশি নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা চালায়। তুমুল সহিংসতার মধ্যে নিম্ন ভোটার উপস্থিতিতে সেই নির্বাচন হয়।

এরপর বিএনপি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই। তবে এবার দশম সংসদ নির্বাচনের আগের সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে তারা। সরকার এবারও সেই দাবি নাকচ করছে।

এর মধ্যে হঠাৎ করেই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।

গত ৭ মে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দেন ওবায়দুল কাদের।

সেদিন তিনি বলেন, “কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত যদি নিতে হয়, তাহলে সংবিধানের মধ্যেই থাকতে হবে। সংবিধানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকলে আপনি যেটা বললেন, এটাতে কোনো অসুবিধা নেই।

“বিএনপি যদি বলে ‘আমরা নির্বাচনে আসব’… নির্বাচনে আসলে তখন এক কথা। তারা নির্বাচন করবেই না তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া। তারা এই সংসদকে চায় না। মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। এসব শর্তারোপের মধ্যে আমরা কীভাবে বলব যে, আপনারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে আসুন বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় আপনাদের দিচ্ছি? তাদের তো সম্পূর্ণ উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর অবস্থান।” 

দুই দিন পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবনায় নেই।

তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কি বিশ্বাস করেন? ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যে সমস্ত কথা তিনি দিয়েছিলেন সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি।

“সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় আস্থা রাখা, বিশ্বাস করা– এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এগুলোকে আমি মনে করি, এটা আরেকটি চক্রান্ত জনগণকে বিভ্রান্ত করবার। তারা বলবে যে এই তো আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ওরা শুনছে না, যাচ্ছে না…।”

‘চাপ নেই’

সরকারের উপর বিদেশি কোনো চাপ নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার - এই তিন দাবি বিএনপির। এসব দাবি নিয়ে বিদেশিরা একটি কথাও বলেনি। কোনো চাপ বা প্রস্তাব দেয়নি।”

অন্য এক প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে আওয়ামী লীগ কোনো উদ্যোগই নেবে না।

২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ যানবাহন হবে বিদ্যুৎচালিত

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক মন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক পরিবহন খাতে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ যানবাহনকে বিদ্যুৎচালিত মোটরযানে রূপান্তর করা হবে।

আগামী নভেম্বরের বিআরটিসির বহরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০০টি দ্বিতল বাস যুক্ত হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। এর ৮০টি চলবে ঢাকায়, বাকিগুলো চট্টগ্রাম মহানগরে।

পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগ ও জেলা শহরেরও এই বাস সেবা সম্প্রসারণ করার কথাও জানান ওবায়দুল কাদের।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিদুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান, বিশ্ব ব্যাংকের কোঅপারেশন ম্যানেজার দানদান চেন।