‘পুলিশ দিয়ে’ বিরোধীদের তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে, দাবি ফখরুলের

পুলিশ ‘এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে’ এ কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 03:08 PM
Updated : 7 Oct 2022, 03:08 PM

পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবির উদ্যোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘তথ্য সংগ্রহ’ করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে এর বৈধ্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বিএনপি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে যে, ঢাকাস্থ স্পেশাল ব্রাঞ্চের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে সকল জেলার পুলিশ সুপার নিজ নিজ এলাকার সকল থানার ওসিকে বেতার বার্তা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা জারি করেছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরকম একটি বিষয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে অফিসিয়ালি এ ধরনের কোনো বার্তা বা নির্দেশনা দেওয়ার কথা আমার জানা নেই।”

ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকাস্থ স্পেশাল ব্রাঞ্চ হেডকোয়াটার্সের বরাত দিয়ে রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি-ডিএসবি) গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেতার বার্তায়… জেলার সকল থানার ‍ওসিদেরকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের রাঙামাটি জেলার কমপক্ষে ৮ জন শীর্ষ ব্যক্তি, প্রতি উপজেলার শীর্ষ ৫ ব্যক্তি এবং জেলার সকল পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের অধীন কমপক্ষে ৫ ব্যক্তি; যারা বর্তমান সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনে ‘জনবল সংগঠক’ বা অর্থায়ন করে কিংবা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করে- এমন ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য যেমন ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বর ইত্যাদি সংগ্রহ করে তার কাছে প্রথমে ইমেইল যোগে এবং পরে হার্ড কপি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন।”

পুলিশের এ কাজের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পুলিশ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের যে তথ্য সংগ্রহ করছে, তা আমাদের সংবিধান কিংবা দেশের অন্য কোনো প্রচলিত আইন বা বিধি বিধানের আওতায় তারা করতে পারে না। পুলিশ সুপার তার আওতায় ওসিদের নিকট বেতার বার্তা বা অন্য কোনো ব্যবস্থায় যেসব তথ্য চেয়েছে তা যে কোনো মানদণ্ডে অবৈধ, বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এখতিয়ার বহির্ভূত ও অননুমোদিত পদক্ষেপ।

“পুলিশের এসব নির্দেশনা সর্বোতভাবে একটি ‘ম্যালা ফাইড ডিরেকশন’ যা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে দমন করার হীন উদ্দেশ্যে জারি করা হয়েছে। বিএনপি এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডেরর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে; আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে এই ধরনের অবৈধ উদ্যোগ বন্ধ করা এবং ভবিষ্যতে নিজেদেরকে এ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল দাবি করেন, বিরোধী নেতাকর্মী শুধু নয়, ‘সমর্থক ও ডোনারদেরও’ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে আদালতে যাবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি। এখন দেশের মানুষকে আপনাদের মাধ্যমে জানাচ্ছি।”

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে যারা অংশগ্রহণ করে বা অন্যান্যভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে, তা ‘আইনানুগভাবেই’ করে থাকে বলে দাবি করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নাম ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, এমনকি এনআইডি নম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহের উদ্দেশ্য কী? এটা অস্বাভাবিক।

“পুলিশ একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী, কোনো দলীয় বাহিনী নয়। সরকারিভাবে এসব তথ্য পুলিশের সংগ্রহ করার কথা নয়। এসব তথ্য নিয়ে পরবর্তীতে এ সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে হামলা-মামলা দায়ের কিংবা অন্যকোনোভাবে হয়রানি করাই এদের উদ্দেশ্য বলে আমরা মনে করি।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটি দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ডও ভেঙে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গণআন্দোলন দমনের হীন উদ্দেশ্যে মানুষ হত্যার জন্য শান্তিপূর্ণ আইনসিদ্ধ গণতান্ত্রিক মিছিলে বিনা উসকানিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

পুলিশের বিশেষ শাখার এমন ‘নির্দেশনা সংবিধান বহির্ভূত’ মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, “তার কারণ হল যে, সভা-সমাবেশ এবং রাজনীতি করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের আছে।সরকারের বিরুদ্ধে যাতে কোনো রকম আন্দোলন না হয়, জনগণ যাতে রুখে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে।এই সার্কুলার অত্যন্ত বেআইনি।

“এই ধরনের সার্কুলার পুলিশের আইনেও নাই, আমাদের সংবিধানেও নাই- কোত্থাও আপনি পাবেন না। অতীতে কোনো সরকারই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো এই ধরনের সার্কুলার পুলিশের মাধ্যমে ইস্যু করেন নাই।”

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, “পুলিশের এই সার্কুলার অর্থাৎ ‘বেতার বার্তায়’ তিনটা শব্দ দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন ওদের প্রচেষ্টাটা কী? অর্থ যোগান দাতা, জনবল সংগঠক, সহযোগী– এর মানে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর ডেটাবেজ তৈরি করবে যেন কেউ বিরোধী দল করতে না পারে। এটাই হচ্ছে উদ্দেশ্য। হুইচ ইজ, আমাদের ফান্ডামেন্টাল রাইটটা খর্ব করা হচ্ছে।

“এটা করার কারও অধিকার নেই। এসব করে জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত্র করা হচ্ছে। সংবিধান এটা এলাউ করে না।”

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “এই সার্কুলার সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। মূলত এটা জারি করা হয়েছে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী কখনোই বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করে কোনো ধরনের সার্কুলার তারা দিতে পারে না।”