এবার ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে বিএনপি

এরপর ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে, ‘জনগণের সরকার গঠন’ করবে, কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন মির্জা ফখরুল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2023, 01:47 PM
Updated : 4 Feb 2023, 01:47 PM

সরকার হটানোর আন্দোলনে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করতে চায় বিএনপি।

আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ থেকে তিনি এ ঘোষণা দেন।

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ ১০ দফা দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন করছে শনিবার ছিল সেটির চতুর্থ কর্মসূচি। ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিটে একযোগে এ কর্মসূচি হয়েছে।

২৪ ডিসেম্বর থেকে জোট বেঁধে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো আন্দোলন শুরু করেছে। শনিবার বিএনপির পাশাপাশি ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে। এসব দলও ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।

নয়া পল্টনে সড়কের একপাশে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবারের কর্মসূচি হবে ইউনিয়ন পর্যায়ে।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জেলা ও মহানগরে পরের কর্মসূচিগুলো পালনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এরপর সেই তাদের (আওয়ামী লীগ) যে ক্ষমতার মসনদ সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে, জনগণের সরকার গঠন করবে।”

ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘‘আসুন আজকে গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়নের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা-জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমরা এগিয়ে চলি, এগিয়ে চলা হবে আমাদের বিজয় ইনশাল্লাহ।”

নয়া পল্টনের সমাবেশে যোগ দিতে বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে হাজারো নেতাকর্মীরা লাল-হলুদ-নীল-সবুজ টুপি পরে সমাবেশে যোগ দেন। কার্যক্রম দুপুর ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়।

হিরো আলমের কাছেও অসহায় সরকার

ছয় আসনের উপ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হিরো আলমের (বগুড়া উপ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী) কাছেও আওয়ামী লীগ এখন কতটা অসহায় তা উপ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। তাকে হারাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবদুস সাত্তার (উকিল আবদুস সাত্তার) যিনি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে তাকে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়।

‘‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে কী, সুষ্ঠু হবে কী, আপনারা ভোট দিতে পারবেন?”

তার এমন প্রশ্নে এসময়ে নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘না’ সূচক শ্লোগান দেন।

বাজারের অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘‘বাজারে অবস্থা আপনারা জানেন। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৬ টাকা বেড়েছে। আজকে মা-বোনেরা এখানে আছেন। তারা জানেন, কী কষ্ট করে তাদেরকে সংসার চালাতে হয়।”

আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার আমাদের ভবিষ্যতে নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহণ করছে। আপত্তি নাই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়।“

তার অভিযোগ, ‘‘কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেনে? ঋণের টাকা আনবেন আর আমাদের জনগনের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবে। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।”

তিনি বলেন, ‘‘এখনও সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের পতন ঘটাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব, কারাবন্দি সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করব।”

ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজকে আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, আমাদের ঐতিহ্য সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সংসদ করেছে, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে, আমাদের ধর্মবোধকে ধ্বংস করছে।

‘‘আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবার চেষ্টা করছে। এই সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটু, সাইফুল আলম নিরব, নারায়নগঞ্জের সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দেন।

এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।