৭ মার্চের ভাষণ বিএনপি নিষিদ্ধ করেছিল: ওবায়দুল কাদের

"স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার একমাত্র বৈধ অধিকার ছিল বঙ্গবন্ধুর।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2023, 05:17 AM
Updated : 7 March 2023, 05:17 AM

বিএনপি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ‘নিষিদ্ধ করেছিল’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ওই দলটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বলে তারা ‘বিশ্বাস করেন না’।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

জাতির মুক্তি সংগ্রামের স্বপ্নে ধারাবাহিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৫২ বছর আগের এই দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে যে ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তা আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেস কোর্সের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

সকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতির পিতার দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

পরে সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, "বিএনপি ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। যে ভাষণ ইউনেস্কো পৃথিবীর অন্যতম সেরা ভাষণের স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই ভাষণ তারা এই বাংলাদেশে ক্ষমতা থাকাকালে নিষিদ্ধ করেছিল। কাজেই এ দিবসের প্রতি, তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাদের ন্যূনতম বিশ্বাস আছে, চেতনা ধারণ করে সেটা আমরা বিশ্বাস করি না৷

"৭ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ স্বাধীনতার ডাক।"

ওবায়দুল কাদের বলেন, "বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেদিনেই ছিল আসলে স্বাধীনতার মুল ঘোষণা। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের পর রাত সাড়ে ১২টা যে স্বাধীনতার ঘোষণা, সেটা আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু স্বাধীনতার মূল ঘোষণা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে৷ এই ভাষণের মধ্যদিয়ে আমাদের ২৩ বছরে স্বাধিকার সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামে পরিণত হয়।

"স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার একমাত্র বৈধ অধিকার ছিল বঙ্গবন্ধুর। কারণ, তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। তৎকালীন পূর্ববাংলায় ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল। কাজেই,… অন্য কারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার বৈধ অধিকার ছিল না। ঘোষক বলে যারা স্বঘোষিত ঘোষক, অনেকেই ছিলেন ঘোষণার পাঠক। পাঠক আর ঘোষক এক কথা না।"

বিএনপি গণতন্ত্র ‘ধ্বংস করেছে’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, “গণতন্ত্র একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। রাতারাতি গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পাবে না। আমাদের চেষ্টা আছে। গণতন্ত্র ক্রমে ক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে। যেটুকুই আছে সেটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে।

"গণতন্ত্র একটা চোখা শব্দ; বলতে হবে, তারা এই জন্য বলে। তাদের ক্ষমতার আমলটা তারা কীভাবে চর্চা করেছে সেটা দেখতে হবে। এটা এমন একটা দল, তাদের নিজেদের ঘরেই গণতন্ত্র নাই। তারা দেশে গণতন্ত্র কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে?"

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, "১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী ভাষণ একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রুপান্তরিত করেছিল।… বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেন।”

তিনি বলেন, "স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি করে৷ তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। আমাদের শপথ নেওয়া প্রয়োজন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এবং যারা দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারা নিয়ে যেতে চায়, যারা দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”