Published : 06 Oct 2024, 09:06 PM
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে জন্য গঠন করা কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আমার দেশ পরিবার’ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা চেষ্টা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মাহমুদুর দেশে ফেরেন সরকার পতনের পর। এই মামলায় আত্মসমর্পণ করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর কারাগারেও যান তিনি, পাঁচদিন পরে মুক্ত হন।
‘মৌলবাদ শব্দ ব্যবহার করবেন না’
‘দেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে’ বলে ইফতেখারুজ্জামানের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকারে থেকে এই ধরনের ‘ব্যক্তিগত’ কথা বলা যায় না… তার বক্তব্য সরকারের বক্তব্য হয়ে যায়। তিনি এই মৌলবাদ কোথায় পেলেন?
“এই মৌলবাদের কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদ’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি ব্যবহার করে ‘আয়নাঘর’ হয়েছে, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এখন ইফতেখারুজ্জামান আবার মৌলবাদের কার্ড ব্যবহার করছেন, আপনার উদ্দেশ্য কী?”
পরে নিজেই নিজের তোলা প্রশ্নের জবাব নিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, “নতুন কায়দায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা এটি আপনার উদ্দেশ্য।
“আপনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। ‘মৌলবাদ’ শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে আমি সতর্ক করে দিতে চাই।”
দেশবাসীর উদ্দেশে মাহমুদুর বলেন, ‘‘অতি ইসলামিকও হবেন না। ‘ফ্যাসিবাদের’ সময় আপনারা কিছু করতে পারেননি। এখন ‘স্বাধীনতা পেয়ে’ বাড়াবাড়ি করবেন না। এর কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
“আস্তিক আর নাস্তিক, হিন্দু ধর্ম এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন, এতে ভারতীয় যে কৌশল, তা আপনারা বাস্তবায়ন করবে।”
অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে আমার দেশ সম্পাদক ক্ষমা চাইতে বলেছেন এক এগারোর পর তার ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে।
‘দেবপ্রিয়কে ক্ষমা চাইতে হবে’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এতই পাওয়ারফুল যে, তাকে এক এগারোর সময় আইন পরিবর্তন করা হয় সরকারে নেওয়ার জন্য। বর্তমানে সরকার প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে আমেরিকায় সফরসঙ্গী হিসেবে সালেহউদ্দিন যাননি, গেছেন দেবপ্রিয়। এই দেবপ্রিয় ২০০৫ সাল থেকে এক-এগারো সরকারের সময় দেশে ইন্ডিয়ান করিডোর দেওয়ার জন্য প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করতেন।
“তার বক্তব্য ছিল যে, করিডোর থেকে দেশ যে শুল্ক পাবে তা দিয়ে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। তার কাছে আমরা জানতে চাই, গত ১৬ বছরে ট্রানজিট থেকে কত ডলার বাংলাদেশ আয় করেছে? দেবপ্রিয়কে তার মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।”
বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দিল্লির ‘পক্ষে’ যারা কথা বলবেন, তাদের সঙ্গে ‘লড়াই চলবে’ বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ না করলে আন্দোলন’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাতদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ও বেআইনি সংগঠন ঘোষণা করতে হবে।
“অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। অন্যথায় আমি সাংবাদিক সমাজকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামব।”
গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যত ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ ঘটেছে তার জন্য একমাত্র ছাত্রলীগই দায়ী বলেও মন্তব্য করেন মাহমুদুর। বলেন, “ছাত্র জনতার বিপ্লবে সারা দেশে হাজারো ছেলে-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, আবু সাঈদ-মুগ্ধকে হত্যা করা হয়েছে… এসব হত্যায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাহিনী ছিল।”
আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের স্বাস্থ্য, অর্থ, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন, বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর নাম পাল্টে আবু সাইদের নামে করা, ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকে ‘শহীদ আবরার অ্যাভিনিউ’ করা, ২০০৯ সালের পর থেকে ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশসহ সাতটি দাবি করা হয় এই মতবিনিময়ে।
আমার দেশ এর বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময়ে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এমএ আজিজ, বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের হাসান হাফিজ, কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, এটিএন বাংলার নির্বাহী পরিচালক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, এমবিএ অ্যাসোসিয়েশনের সৈয়দ আলমগীর, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজুও মত বিনিময়ে বক্তব্য রাখেন।