“দিন তারিখ বিএনপি দেয় নাই, আমি দিতে চাই না, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্রের ভাবনায় নির্বাচনের মুখোমুখি জাতিকে করতে হবে।”
Published : 30 Aug 2024, 02:38 PM
দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেছেন, নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তারা ছেড়ে দিয়েছেন।
শামসুজ্জামান বলেন, “ভোট ছাড়া, মানুষের ভোটিং পাওয়ার ছাড়া কোনো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এটা আমার জানা নেই। সেজন্য এক নম্বর চয়েস হল, দিন-তারিখ বিএনপি দেয় নাই, আমি দিতে চাই না, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্রের ভাবনায় নির্বাচনের মুখোমুখি জাতিকে করতে হবে। জাতি ঠিক করে নেবে কার প্রয়োজন।
“এজন্য আমাদের ভালোবাসার এই সরকারকে বলব, মানুষের ভোটাধিকারটা দেন। যাতে প্রশাসনের লোক, আইনশৃঙ্খলার লোক, সেনাবাহিনীর লোক, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ ভোটটা দিয়ে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, এই অধিকারটুকু আপনি দেন।”
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশের কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে ‘ভয় পায়’।
তিনি বলেন, “কেউ বলছেন, বন্যায় ভাসছি আবার এখন নির্বাচনের দরকার কি? কিছু মানুষ আছে, কিছু দল আছে আমাদের সঙ্গে থাকলেও ১৯টা সিট পায়, আমাদের কাছ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে তারা তিনটা সিট পায়, তারা তো ভোট ভয় পাবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল ও সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারকে স্বাগত জানানো হলেও এক সপ্তাহ ধরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রশ্নে ‘অতি দ্রুত’ সংলাপের দাবি জানাচ্ছিলেন।
এর মধ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের যে কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সেখানে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এর মধ্যে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আলাদা করে বৈঠকও সেরেছেন। শনিবার দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
এদিকে দখলবাজ-চাঁদাবাজদের ‘দুষ্কৃতিকারী’ অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন শামসুজ্জামান।
তিনি বলেন, “দেশটা আমাদের। চারিধারে কিছু মুখোশধারী বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে, চাঁদাবাজির চেষ্টা করছে। বিএনপি স্পষ্টভাবে বলেছে, এরা দুষ্কৃতিকারী। আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান বলেছেন, এদেরকে ঠেকাতে হবে। তাদের পুলিশে দেন।”
“সে যেই হোক তাকে মানুষের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে থামাতে হবে। এই দুবৃর্ত্তায়ন যারা করে গেছে আমরা ১৭ বছর এদের বিরোধিতা করেছি। সেই দুর্বৃত্তদের সমর্থন করার কোনো সুযোগ নাই, যেখানে যে অবস্থায় পাবেন তাদেকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে।”
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে সরকার,আমরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মামলা, তারেক রহমানের মামলা, মির্জা ফখরুল ইসলামের মামলা, বিএনপিসহ বিরোধী দলের আড়াই লাখ মামলার অধীনে ৬০ লাখ আসামি আছে। এরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছ, অনেকে যাবজ্জীবন, ফাঁসির অর্ডার নিয়ে জেলে আছেন তারা এখনো মুক্তি পায়নি।
“এদের মামলা যতক্ষণ প্রত্যাহার না হবে, যতক্ষণ না মুক্তি হয়, ততক্ষণ ধরে নিতে হয় এই সরকার বড় দাগের কোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।”
খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জেল হোসেনে হৃদয়ের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহ মো. নেসারুল হক, কৃষক দলের ওবায়দুর রহমান টিপু, তাঁতী দলের কাজী মনিরুজ্জামানসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।