১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
Published : 21 Aug 2023, 04:17 PM
প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর উদযাপনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে কর্মসূচি।
সেদিন সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
দলটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভাও করবে। এগুলো কবে কখন কোথায় হবে তার ভেন্যু ও সময়সূচি ঠিক করে পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে সকল জেলা ইউনিট ও অঙ্গসংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করবে নিজেদের মত করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন।
৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন; ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক।
১৯৭৭ এর ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়, জিয়া তখন ওই দায়িত্বও নেন। সে সময় জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে।
সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। তবে সে দল তখন দেশের রাজনীতিতে নাড়া দিতে পারেনি।
ওই বছর ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পদে থেকে পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যান জিয়া। ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে ওই 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি হন।
নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
জাগদল, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, আবদুল হালিম-আকবর হোসেনের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ও শাহ আজিজুর রহমানের মুসলিম লীগ বিলীন হয় জিয়ার বিএনপিতে।
প্রতিষ্ঠার সেই দিনটি স্মরণে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঠিক করতে সোমবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ সভা হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিএনপিকে নিয়ে বার বার ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে এই দলটিকে ভেঙে ফেলার, ধ্বংস করবার জন্য। কিন্তু কখনোই বিএনপিকে ধ্বংস করতে পারেনি।
“বিএনপি একটা প্রবাহমান স্রোতস্বীনি নদী, সে বয়ে চলেছে। এখানে কেউ এসেছে, কেউ গেছে কখনো। কিন্তু বিএনপির গতিকে কেউ রুদ্ধ করতে পারেনি।”
জিয়াউর রহমান ও বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘উন্নয়ন চিত্রও’ তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপির ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’
বর্তমান সরকারের পতন ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন করছে, তাকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ও আখ্যা দেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আজকে বিএনপি বড় রকমের দায়িত্ব নিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই জাতির দ্বিতীয় একটা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছে। সেই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে গণতন্ত্র ফিরে পাবার মুক্তিযুদ্ধ, সেই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার মুক্তিযুদ্ধে, সেই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার মুক্তিযুদ্ধ।”
এটা ‘হালকাভাবে’ কথা কোনো কথা নয় জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা এটাকে মনে করি যে, বাংলাদেশের এই ৫২ বছরের মধ্যে সবচাইতে সংকটময় মুহূর্ত এখন। যারা জোর করে বিনা নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা সর্বশক্তি দিয়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থাটাকে ধবংস করে দিয়েছে।
“আজকে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ধবংস করছে।”
যৌথ সভায় আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মনির হোসেন, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারিও অংশ নেন।
সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান, শ্রমিক দলের মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জু, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব উপস্থিত ছিলেন।