“আমরা এও দাবি জানাই, তাদেরকে (প্রবাসীদের) যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়।”
Published : 11 Dec 2024, 06:01 PM
সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদে নির্বাচন কমিশনকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান।
বুধবার ঢাকার মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় মজলিস শুরার অধিবেশনে তিনি বলেন, যে যুব সমাজের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন এসেছে, তাদের সবাইকে অবশ্যই এবার ভোটার তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত করতে হবে।
“তার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এর জন্য যৌক্তিক যে সময় লাগবে সেটা অবশ্যই সরকারকে… আমরা বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত সময় নয়… যৌক্তিক সময়টাই দিতে চাই।”
‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’, ‘নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো নয়’–তিন মাস ধরে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এমন কথা বলে এলেও নভেম্বরের শেষে দলটির নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ‘যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষ করে’ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন।
গত ২৯ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “আমি বর্তমান উপদেষ্টা সরকারকে বলব, আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার কাজ শেষ করে তারপরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এটা যদি না হয়, তাহলে এ নির্বাচন তো নির্বাচন হবে না।”
তার দুই সপ্তাহের মাথায় জামায়াত আমীর শফিকুর রহমান নির্বাচনের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেন।
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম মৌলিক দুটি বিষয়, অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত। একটি হচ্ছে, রাষ্ট্রের সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
“দ্বিতীয়টি হচ্ছে, অতীতের সরকার জুলুম করে বহু জায়গায় তৎকালীন বিরোধী দলে যারা ছিলেন তাদের এলাকাগুলোকে টার্গেট করে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে, আসন বিন্যাসের নামে জুলুম করেছেন। এগুলোকে পূনর্বিন্যাস করা লাগবে বিবেক এবং বাস্তবতার আলোকে।”
শফিকুর রহমান বলেন, “নিশ্চয় সবাই একমত হবেন, (আওয়ামী লীগের সময়ে) গত তিনটি নির্বাচনে ভোট বর্জন… ভোট না হওয়ার কারণে এদেশের মানুষ ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। অসংখ্য যুবক-যুবতীর বয়স হয়েছে ভোট দেওয়ার, কিন্তু ভোটার হওয়ার আগ্রহই তারা অন্তরে ধারণ করত না।
“পাশাপাশি এবারকার এই যুদ্ধটা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে শুধু দেশবাসী করে নাই, প্রবাসে আমাদের যে সমস্ত নাগরিকরা আছেন, তারা সবাই একসাথে যুদ্ধ করেছেন। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
জামায়াত আমির বলেন, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একজন নাগরিকের দেশে আসার প্রয়োজন নেই। বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এখানে থেকেই তা সম্ভব। আমরা এও দাবি জানাই, তাদেরকে (প্রবাসীদের) যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়।”
কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার এই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মজিবুর রহমান, আবদুল্লাহ মো. তাহের, এম এম শামসুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মূল মঞ্চে ছিলেন। সারা দেশ থেকে মজলিশে শুরার সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেন।
শফিকুর রহমান বলেন, “দেশ যখন এই পরিবর্তনের ফলে একটা ইতিবাচক ধারায় যাচ্ছে, তখন আমরা লক্ষ্য করছি এদেশকে অশান্ত করার জন্য পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসর দেশে বিদেশে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে এই সমাজকে অস্থির করতে চায়, অস্থিতিশীল করতে চায়।”
তাদের এই ‘অপপ্রয়াস’ জাতিকে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা একটা সুন্দর ও মানবিক দেশ চাই, আমরা একটা দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই, আমরা জাস্টিস সোসাইটি চাই, সুবিচার সম্পন্ন একটা সোসাইটি চাই। আমরা যুবকদেরকে এদেশের উন্নয়নের কারিগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।”
সেই ‘কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ’ গঠনে সবার প্রতি ঐক্যের আহ্বান রেখে জামায়াত আমীর বলেন, “এজন্য আমরা সকল শক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাব, জাতীয় স্বার্থের জায়গায় আমরা যেন কখনো বিভক্ত না হই। বরং আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি।”
পুরনো খবর
অবস্থান পাল্টে 'যত দ্রুত সম্ভব' নির্বাচন চাইল জামায়াত
সংলাপ: নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত 'বিপরীত মেরুতে'
'যারা ভোটে জিততে পারবে না, তারা এসব বলে': জামায়াত আমিরকে ফখরুল
কিছু দলকে দেখলে মনে হয় ক্ষমতায় চলে গেছে: গয়েশ্বর