চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পণ্ড হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ।
Published : 05 Jan 2015, 08:10 PM
এ সময় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে দেখা যায় নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সোমবার দুপুরে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনের নূর মোহাম্মদ সড়কের ফুটপাতে পাশাপাশি দুটি ট্রাক দাঁড় করিয়ে প্রস্তুত করা হয় সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ।
বক্তব্য দেওয়া শুরু হয় বেলা আড়াইটায়। তবে ৩টার দিকে জামায়াতে ও শিবিরের একাধিক মিছিল যোগ দেওয়ার পরই শুরু হয় নানারকম উস্কানিমূলক বক্তব্য।
এর আগে থেকে নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়, নাসিমন ভবনের সামনে, নেভাল এভিনিউ মোড় ও লাভ লেইন মোড় এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে ট্রাক দুটির সামনে অবস্থান নেওয়া শিবির নেতাকর্মীরা তাদের দল ও নেতার নামে স্লোগান দিতে শুরু করে। নেভাল এভিনিউর মোড়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টাও করে তারা।
বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সমাবেশে বক্তব্যে শিবিরের নগর উত্তর শাখার সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, “আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে বিদায় করতে শিবিরই যথেষ্ট। তাদের বিদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব।”
জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যাকারী। আমাদের মিছিল-সমাবেশ করতে না দিলে দেশে তাদের ঠাঁই হবে না। তাদের পাশের দেশে পালিয়ে যেতে হবে।”
শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামায়াত নেতা শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, “শেখ হাসিনাকে তার সিংহাসন ছেড়ে দিতে হবে তারপরই আমাদের আন্দোলন থামবে।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখা জামায়াত শিবিরের এই তিন নেতাই একাধিক নাশকতা মামলার আসামি এবং আগেও একাধিকবার নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ তিন জনের বক্তব্যের পর বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মোস্তফা কামাল পাশা।
এসময় কালো কাপড়ে গণতন্ত্র লেখা একটি কফিন নিয়ে সমাবেশের ভেতর মিছিল শুরু করে শিবিরকর্মীরা। মিছিলটি নেভাল এভিনিউ’র দিক থেকে ঘুরে কাজীর দেউড়ির দিকে এগিয়ে গেলে ওই মিছিলে থাকা বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা বেপরোয়া ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ বাধা দিলে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।
এ সময় পুলিশ বেশ কিছু টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পরে সমাবেশস্থলে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা নেভাল এভিনিউর দিকে সরে যান।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বারবার মাইকে বলতে থাকেন, “আমাদের সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। আপনারা এখানে থাকেন।”
এরপরও নেতাকর্মীদের চলে যাওয়া থামাতে না পেরে তিনি নিজেই খালেদা জিয়ার নামে মাইকে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
তবে ততক্ষণে কাজীর দেউড়ি মোড়ের সংঘর্ষ নাসিমন ভবন ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এসময় সমাবেশ স্থলের উল্টো পাশে আউটার স্টেডিয়ামের কোণায় রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়।
ট্রাকে নির্মিত মঞ্চে নগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি শামসুল আলম বক্তব্য রাখার সময়েই সংঘর্ষ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর এনায়েত বাজার মোড় থেকে কাজীর দেউরী পর্যন্ত পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
এ সময় আউটার স্টেডিয়ামের মাঠে সদ্য শেষ হওয়া বিজয় মেলার দোকানের কাঠামোতেও আগুন দেয় সংঘর্ষকারীরা। ওইখানে রাখা কয়েকটি পিকআপ ভ্যানও ভাঙচুর করে তারা।
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রায় ১৫ মিনিটের সংঘর্ষ শেষে বিএনপির শীর্ষ নেতারা নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। পুলিশের সাথে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।
বিকাল ৫টার পর নাসিমন ভবন ও এর আশেপাশের এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
সংঘর্ষের বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজীর দেউড়ি মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরাই সংঘর্ষ শুরু করে। তারা ভাঙচুর ও ককটেল ছোড়ায় আমরা টিয়ার সেল ছুড়তে বাধ্য হয়েছি।”
এ ঘটনায় উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এনামুল হক এনামসহ বিএনপি জামায়াতের আড়াইশ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।