নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুই মামলায় বিচার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
Published : 07 May 2014, 05:49 PM
ঢাকা তৃতীয় মহানগর দায়রা জজই এই মামলা দুটির বিচার করবেন। তবে পুরান ঢাকার আদালতে না বসে এই মামলার জন্য তার এজলাস চলে যাবে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচারও আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসিয়ে করা হয়েছিল। আসামির সংখ্যা অনেক হওয়ায় তখন ওই পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার।
আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে বহুসংখ্যক আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় এলাকাটি আদালত চলাকালীন জনাকীর্ণ থাকে।
“এ কারণে নিরাপত্তাজনিত কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার মামলাগুলো পরিচালনার জন্য ওই (আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ) আদালতকে অস্থায়ী আদালত হিসাবে ঘোষণা করেছে।”
আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত পরিবর্তন হলেও বিচারক পরিবর্তন হবে না।”
গত ৩০ এপ্রিল মন্ত্রণালয় এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে বলে জানান তিনি। এর আগে মামলাকারী দুদকও আদালত স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার এই দুই মামলায় পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালতে গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন হয়।
অভিযোগ গঠনের সময় ব্যাপক হট্টগোল হয়েছিল, যে কারণে এজলাস ছেড়ে খাসকামরায় বসে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
মামলা দুটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণেষাদিত’ বলে বিএনপি দাবি করে আসছে। দুই মামলার অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে খালেদা হাই কোর্টে গেলেও গত ২৩ এপ্রিল তা খারিজ হয়ে যায়।
ফলে এখন বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
জিয়া অরফ্যানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে। ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে খালেদা, তার ছেরে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। আর চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হিসাবে রয়েছেন আরো তিনজন।
অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এদের মধ্যে সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। তারেক উচ্চ আদালতের জামিনে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনিসহ বাকি দুজন পলাতক।
দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।