ইভিএম চেয়ে বিএনপির চিঠি, ইসির ‘না’

ইভিএমের বিরোধিতা করে আসা বিএনপি ‘পরীক্ষা করার জন্য’ একটি যন্ত্র চাইলেও নির্বাচন কমিশন বলেছে, তা দেখতে হলে ইসিতে আসতে হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2011, 05:05 AM
Updated : 1 Dec 2011, 05:05 AM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা, ডিসেম্বর ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- এতদিন ধরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিরোধিতা করে আসা বিএনপি এবার ‘পরীক্ষা করে দেখার জন্য’ নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি যন্ত্র চেয়েছে।
তবে এক জন নির্বাচন কমিশনার বলছেন, বিএনপির দপ্তরে এ যন্ত্র দেওয়া যাবে না, বরং তারা ইসিতে এসে দেখে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি ইভিএম যন্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেয় বিএনপি।
বিএনপির চাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান কী হবে- জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হবে। তবে ইভিএম সরবরাহ করার কোনো নিয়ম নেই। তাই এ যন্ত্র কাউকে দেওয়া হবে না।”
“তারা (বিএনপি) চাইলে তাদের কারিগরি প্রতিনিধি নিয়ে ইসিতে এসে ইভিএম পরীক্ষা করতে পারে। ইভিএম ব্যবহারে বিএনপির আপত্তির বিষয়টি সমাধানে তাদের কারিগরি প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসির বিশেষজ্ঞ প্যানেলে সর্বদা প্রস্তুত,” যোগ করেন তিনি।
গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একটি ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেখানে সাফল্য পাওয়ার পর আরো একটু বড় পরিসরে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে ইসি।
এর ধারাবাহিকতায় গত ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টির ৫৮টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ইভিএম ব্যবহারের প্রবল বিরোধিতা করেন। পরে সেনা মোতায়েন না হওয়ার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
নবগঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি এ নির্বাচনে সব ওয়ার্ডেই ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। এতে আপত্তি এবং ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়নের অনুরোধ জানিয়ে গত ২২ নভেম্বর কমিশনকে চিঠি দেয় বিএনপি।
তবে জবাবে কমিশন পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, কুমিল্লা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে এবং সেনাও থাকবে না।
একটি ইভিএম যন্ত্র দিন
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই চিঠি কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিকের কাছে পৌঁছান দলটির সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।
চিঠিতে বলা হয়, ইসি পর্যায়ক্রমে সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইতোপূর্বে এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি জানানো হয়েছিল। ইভিএম এমন একটি যন্ত্র যার ত্র“টি নিয়ে বহির্বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সুতরাং এ যন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় থাকায় ভোটের দিন ভোট গ্রহণে এ যন্ত্রের ব্যবহার বিএনপি গ্রহণযোগ্য মনে করে না।
“এ সত্ত্বেও দলের বিশেষজ্ঞরা ইভিএম যন্ত্রটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে একটি ইভিএম যন্ত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে সরবরাহ করার জন্য দলের হয়ে অনুরোধ করছি।”
কেন দেবে না ইসি
ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইভিএম কাউকে দেওয়া হলে তার যন্ত্রাংশ পাল্টে ত্র“টি বের করার সুযোগ থাকে। ভারতের একটি এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
“পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হলে সামনা সামনি করাই ভালো। অন্য কোথাও নেওয়া হলে বিতর্কের সুযোগ থাকে। যত এক্সপেরিমেন্ট থাকুক না কেন- দীর্ঘদিন ধরেই ইসিতে এসে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করতে পারে বলে আমি মনে করি,” বলেন তিনি।
ইসিকে ইভিএমের প্রযুক্তিগত কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট এবং সেনা বাহিনীর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।
আইআইসিটি পরিচালক অধ্যাপক এস এম লুৎফুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দেশে তৈরি এ ইভিএমের নির্ভুল ব্যবহার পরীক্ষিত। এতে কারচুপির সুযোগও নেই।
“কিন্তু ইভিএম যাচাই-বাছাইয়ের যন্ত্র কোনো বাসায় নিয়ে যাওয়ার যুক্তি দেখি না। এ যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে যত দিন লাগুক, ইসি ও বিএনপি’র বিশেষজ্ঞ প্যানেল বসতে পারে। ইসির নির্ধারিত যে কোনো স্থানে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আপত্তি নেই,” বলেন তিনি।
ইভিএম নিয়ে সংলাপে নিবন্ধিত দলগুলো তাদের দাবি নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মুখোমুখি হয়েছিল। তবে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল এতে অংশ নেয়নি।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক শুনানিতে এক সপ্তাহের জন্য ইভিএম যন্ত্র চেয়েছিল বিএনপির প্রতিনিধি দল। তবে সময় স্বল্পতার কারণে তা সরবরাহ করা হয়নি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/আরএ/জেকে/এমআই/১৯১০ ঘ.