খালেদার ‘চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য’ হলে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ: কাদের

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘চিকিৎসার নামে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা’ করবে, তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে বলে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2021, 02:24 PM
Updated : 26 Nov 2021, 03:35 PM

শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দেশের সংবিধান ও আইন দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক নিয়মনীতির মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার সবটুকু সুযোগ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মানবিক হৃদয়ের কল্যাণে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়া বাসায় থাকছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ পাচ্ছেন।

“হতে পারে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইনের চোখে তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বর্তমান পরিচয় সাজাপ্রাপ্ত আসামি- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া সরকারি আদেশে মুক্ত থাকার মধ্যে এখন অসুস্থ হয়ে ঢাকার বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে রয়েছেন।

৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তার দলও দাবি তুলেছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, বর্তমান অবস্থায় সেই অনুমতি দেওয়ার আইনি সুযোগ নেই।

বিএনপি দেশের রাজনীতিতে ‘প্রতিহিংসার’ জন্ম দিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর উদারতাকে প্রতিহিংসা বলতে দ্বিধা করছেন না। এই দেশের রাজনীতিতে তারা প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছে।

১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, বিএনপির আমলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর বিভিন্ন নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকে মির্জা ফখরুল সাহেব বড় বড় কথা বলেন, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই- কারো চিকিৎসার নামে জনগণকে জিম্মি করা যাবে না, কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেশবিরোধী এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে প্রতিহত করতে সারা দেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান ও সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। যারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে, আমরা তাদের সমুচিত জবাব দেব।”

বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে ‘স্লো পয়জনিং’ করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার যুবদলের এক কর্মসূচিতে মন্তব্য করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তার জবাবে কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব বলেছেন, বেগম জিয়াকে নাকি স্লো পয়জনিং করা হচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই। দণ্ডপ্রাপ্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে আজকে যে সুবিধা গ্রহণ করছেন বেগম জিয়া, এটা প্রধানমন্ত্রীর উদারতার কারণে। তার পাশে থাকেন আপনারা, ফখরুল সাহেবরা। তাকে যে খাওয়ায় সে পরিবারেই লোক। তার আশেপাশে সর্বক্ষণ ঘোরাফেরা করে বিএনপির লোকেরা। আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের কেউ তার পাশে থাকে না। তার ব্যক্তিগত পছন্দের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা দিচ্ছেন।

“আশপাশের লোকেরা সব বিএনপির, পরিবারের, আপনারা। স্লো পয়জনিং যদি করে থাকে, তাহলে পাশের লোকেরাই করতে পারে। হুকুমের আসামি শেখ হাসিনা হবে না, হলে ফখরুল সাহেব আপনি হবেন।” 

মির্জা ফখরুলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “আপনাদের পছন্দের লোকেরা চিকিৎসা করাচ্ছেন। এখানে আওয়ামী লীগকে জড়াচ্ছেন কেন? শেখ হাসিনা কেন হুকুমের আসামি হবে।

“বেগম জিয়াকে আপনারা মাইনাস করার জন্য স্লো পয়জনিং করছেন কিনা, সেই রকম কিছু করবেন বলেই কি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে আওয়ামী লীগের ওপর, শেখ হাসিনার ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছেন?

কাদের বলেন, “খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের কোনো দায় নেই। কোনো কিছু হলে দায় বিএনপিকেই নিতে হবে, মির্জা ফখরুল সাহেবদের নিতে হবে।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, প্রচার ও প্রকামনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।