আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার ‘অধিকার নেই’: ফখরুল

আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার ‘অধিকার নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন সরকার পরিবর্তন এখন ‘জনগণের দাবি’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 10:38 AM
Updated : 26 Oct 2021, 10:51 AM

মঙ্গলবার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সম্প্রীতি সমাবেশে’ তিনি এ কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দেশে সরকার পরিবর্তন এখন জনগণের দাবি। আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নাই। তারা কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারেনি।

“তারা আজকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করে, তারা আজকে মানুষের অধিকার ব্যাহত করে, তারা আজকে জনমানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাই বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।”

‘নিরপেক্ষ সরকারের’ কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের’ পরিচালনায় ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন দেওয়ার দাবি আবারও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব অভিমুখে বিএনপির সম্প্রীতি শোভাযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এ সমাবেশে যোগ দেন। ১১টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় ১১টা ২৮ মিনিটে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমরা একটা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে, একটা র‌্যালির মাধ্যমে, সরকার যে পরিকল্পিতভাবে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে তার প্রতিবাদ জানাতে শান্তিপূর্ণ র‌্যালি করে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাব।

“আমরা চিঠিও দিয়েছিলাম আগে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে সকাল থেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের এখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এখন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করছি।”

৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমাদেরকে একটা সভা করার জায়গা দেয় না, একটা মিছিল করার জায়গায় দেয় না। মানুষের যে অধিকার সেগুলোকে দমন করার জন্য তারা সবরকম নির্যাতনমূলক-দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু, মুসলমানের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে…

“আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরে তারা আঘাত হেনেছে। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা দয়া করে একটু শান্ত থাকবেন। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর কোনো আঘাত আসলে সেটা আমরা সামনে গিয়ে অবশ্যই আমরা প্রতিহত করব, প্রতিরোধ কর।”

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি অনুরোধ করব, এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যে যেখান থেকে এসছেন চলে যাবেন। আমরা কোনো মিছিল বা র‌্যালি করছি না সম্প্রীতির স্বার্থে।”

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এবং নির্বাচনে যাব না।

“আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে আগামী দিনে নির্বাচন করব। সকলে আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহন করুন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের আমাদের যে সংগঠিত করছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলনের ডাক পড়বে।

“সময় পাবেন অথবা সময় পাবেন না। আজকে যেমনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার থেকে শতগুন শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। রাজপথে যে বাধা আসবে সেই বাধা অতিক্রম করতে হবে। আঘাত করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আঘাত করলে আমরা নির্ভয়ে মাথা পেতে নেব না- এই কথাটা স্পষ্টভাবে প্রশাসনকে বলতে চাই, এই কথাটা সরকারকে বলতে চাই। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনুন।”

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ আন্দোলনের মাধ্যমেই, অন্য কোনো পথ নেই। সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।

“এরশাদের সময়েও মন্দিরে হামলা হয়েছে। কিন্তু এরশাদের পতন কেউ ঠেকাতে পারে নাই। আজকে মন্দিরে হামলা করে ক্ষমতা টেকানো যাবে না। এই জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজ, তাবেদার সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।”

প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হায়দার আলী খান লেলিন, আমিরুজ্জামান শিমুল, নিপুণ রায় চৌধুরী, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন