বাজেটে জনস্বার্থের সব খাত চরমভাবে উপেক্ষিত: বাম জোট

নতুন অর্থবছরেরর প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ জনস্বার্থের সব খাত ‘চরমভাবে উপেক্ষিত’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2020, 12:49 PM
Updated : 12 June 2020, 12:49 PM

জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের পরদিন শুক্রবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানান তারা।

প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও গবেষণাসহ উৎপাদনশীল জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে জাতীয় বাজেটের অন্তত ৫৫ ভাগ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বাম জোট নেতারা।

তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, “প্রবৃদ্ধির নেশায় অন্ধ সরকার করোনা থেকে কোনো শিক্ষাই নেয়নি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে জনস্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও গবেষণাসহ জনস্বার্থের সব কটি খাত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।”

সরকার সম্পূর্ণ ‘আমলাতন্ত্রিক পদ্ধতিতে’ বাজেট প্রণয়ন করেছে বলে অভিযোগ করেন গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার না দিয়ে লুটেরা ধনিক, কালো টাকার মালিক, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। খাতওয়ারি বাজেট বিশ্লেষণ করলে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া সরকারকে যেন তথাকথিত প্রবৃদ্ধির অন্ধ মোহে পেয়ে বসেছে।”

বাজেটের ৪২ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে প্রশাসন, সুদ পরিশোধ, সামরিক ও স্বরাষ্ট্র খাতে। অন্যদিকে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও মাদ্রাসা বাদে), সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রম ও প্রবাসী খাতে রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ বা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।

বাজেটে কৃষক, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ আসেনি বলে অভিযোগ আনেন বাম জোটের নেতারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, “দেশের আমলা খাতে বাজেটের প্রায় ২০ ভাগ বা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের ৫ টাকার মধ্যে ১ টাকাই চলে যাবে এই দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্রের পেছনে। অথচ এরা হচ্ছে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১.২৩ শতাংশ।

“আর শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জিডিপিতে ১৪% অবদান রাখা, দেশের ৪০ ভাগের কর্মসংস্থান, ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়াসহ সিংহভাগ মানুষ যে খাতের উপর নির্ভরশীল সেই কৃষি খাতে বরাদ্দ টাকার অংক বাড়লেও আনুপাতিক হারে গতবারের তুলনায় কমেছে।”

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ নিয়েও অসন্তোষ জানিয়ে বলা হয়েছে, “করোনা সংকটে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এবারও জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। টাকার অংকে মাত্র ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা যা জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ০ দশমিক ৯২ শতাংশ।”

২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতি, ২০১২ সালের স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র ও করোনাভাইরাসের বিশেষ বাস্তবতা অনুযায়ী এ বছর স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ অর্থাৎ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তারা।

পাশাপাশি সংকটকালীন সময়ে কর্মহীন দরিদ্র নাগরিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা স্কিমের আওতায় আনার জন্য বিশেষ বরাদ্দ, কৃষি খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ ভাগ, দেশে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকের কর্মসৃজনসহ বেকারদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা গবেষণা খাতসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে জাতীয় বাজেটের অন্তত ৫৫ ভাগ টাকা বরাদ্দ করার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।

বাম জোটের যৌথ প্রতিক্রিয়ায় স্বাক্ষর করেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাদিুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।