কাজ না করলে বড় দায়িত্বে রেখে লাভ নেই: কাদের

আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে কাজের মূল্যায়নই প্রাধান্য পাবে বলে বলে মনে করছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 02:35 PM
Updated : 9 Dec 2019, 02:35 PM

তবে কে কোন পদ পাবে, সেটা দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই চূড়ান্ত করবেন বলে আবারও জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চান সাধারণ সম্পাদক কাদেরের কাছে।

কেন্দ্রীর কমিটি থেকে বাদ পড়ার সংখ্যা কেমন হতে পারে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা আসলে মন্ত্রিসভার মতোই, এখানে পারফর্মেন্সের বিষয় আছে।

“যারা নন পারফর্মেন্সের বা যাদের পারফর্মেন্স পুওর, তাদের তো অহেতুক বড় বড় দায়িত্বে রেখে কোনো লাভ নেই। শেষ বিচারে পারফর্মেন্স যাদের পুওর, তাদের দায়িত্বে পরিবর্তন হতে পারে। কেউ বাদ যায় না; দায়িত্বে পরিবর্তন হয়।”

‘নেত্রী চাইলে’ দলে বদল আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  “নেত্রী টিম নিজেই সাজান। তিনি যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করেন। 

“যে কোনো পদে পরিবর্তন হতে পারে। এ নিয়ে আমাদের অসুস্থ কোনো প্রতিযোগিতা নেই নেতৃত্বের।”

যে পরিবর্তনই শেখ হাসিনা করুক, তা সবাই ‘এক বাক্যে’ মেনে নেবেন বলে মনে করেন কাদের।

সভাপতির পদে আবারও শেখ হাসিনাকেই দেখতে চাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী তো বারবার বিদায় নিতে চান, তিনি যেতে চাইলেও যেতে নাহি দেব। আমাদের কাউন্সিলরদের এটা হলো সর্বসম্মত চিন্তাভাবনা।”

অসুস্থতার পর কাজ চালিয়ে যেতে অসুবিধা হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে ৬৭ বছর বয়সী কাদের বলেন, “মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো একটি ট্র্যাকে চলে এসেছে। দলেও একটা সিস্টেম গ্রো করেছে। বিভাগীয় দায়িত্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা রয়েছেন। কোনো অসুবিধা তো হয়নি।

“দায়িত্ব পালনে আমি খুব কোনো চাপের মুখে নেই, কোনো অসুবিধাও ফিল করছি না। অসুস্থতা হয়ে গেছে, এটার উপর তো আমার হাত নেই। আল্লাহর রহমতে এখন শারীরিকভাবে সুস্থবোধ করছি। তা না হলে এত প্রোগ্রাম কীভাবে করছি?”

হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়লে গত মার্চে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যান কাদের। সেখানে চিকিৎসা শেষে মে মাসে দেশে ফিরে পুনরায় কাজে যোগ দেন তিনি।

আবারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে তা পালন করতে রাজি আছেন ওবায়দুল কাদের। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সেটা উনার (শেখ হাসিনা) ইচ্ছা, উনি যদি বলেন আমার দায়িত্ব পালনে কোনো অনীহা নেই। আর তিনি যদি নতুন কাউকে আনতে চান, সেটাও স্বাগত।”

নতুন বছরে মন্ত্রিসভায় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “সেটা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। সেটাও তো প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।

তবে ২০-২১ ডিসেম্বর সম্মেলনের আগে মন্ত্রিসভায় কোনো পরিবর্তন না আসার আভাস দিয়ে তিনি বলেন, “এ মাসে সম্ভাবনা কম। নতুন বছরে হবে কি না, সেটা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন।”

তবে মন্ত্রিসভায় কেউ ‘নন পারফর্মার’ কেউ রয়েছেন কি না, তা নিয়ে কথা বলতে চাননি ওবায়দুল কাদের।

“আমি একজন মন্ত্রী, আরেকজন মন্ত্রীকে নন পারফর্মার কেমন করে বলব? এটা তো জবাবদিহিতা, যার কাছে তিনি মূল্যায়ন করবেন।”

শাজাহান খানের কথা শ্রমিকদের ‘খুশি করতে’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চান।

তিনি বলেন, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হিসেবে শ্রমিকদের ‘খুশি’ রাখতে কিছু কথা বলতে হয়।

“ওখানে উনি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা, সে হিসেবে তাদেরকে খুশি রাখতেও কিছু কথা বলতে হয়। আমাদের কাছে তো ওসব কথা বলে না। সেখানে তাকে হয়ত বলতে হয় বলার জন্য। আবার এখানে হয়ত আমাদের কাছে বলবেন আমাকে তো…।”

রোববার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারে (ডিটিসি) এক অনুষ্ঠানে ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘মুখোশ’ উন্মোচনের হুমকি দিয়ে তাকে ‘জ্ঞানপাপী’ আখ্যা দেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরি সভাপতি শাজাহান খান।

ইলিয়াস কাঞ্চনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন,“আপনি যে বিদেশিদের কাছ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে কোটি কোটি টাকা নিয়ে আসছেন। আপনি কয়টি প্রতিষ্ঠান করেছেন, কয়েকটি স্কুল করেছেন, কয়জন মানুষকে  ট্রেনিং দিয়েছেন- আমি তার তথ্য বের করতেছি।

ইতোমধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে এই বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতে শাজাহান খানকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি।

তবে শাজাহান খানের এই বক্তব্যে সরকারের  বিপদে পড়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “সরকারের বিপদে পড়ার কিছু বিষয় নেই। সরকার সঠিক পথেই আছে।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেবেন, সেভাবেই সরকার চলবে, আইনের বাস্তবায়নও হবে, এখানে কারও ইচ্ছায় কোনো কিছু হবে না, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।” 

জামিন শুনানি পিছিয়ে আগামী ১২ ডিসেম্বর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপির বিক্ষোভের কর্মসূচির সমালোচনা করে কাদের বলেন, “তারা এখন সব কিছুতে ব্যর্থ হয়ে আদালেতেদর বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে কি আদালতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন? আমার এটাই প্রশ্ন।”