রোববার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারে (ডিটিসি) এক অনুষ্ঠানে এই হুমকি দেন তিনি।
পরিবহন শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে ‘জ্ঞানপাপী’ আখ্যায়িত করেন।
ইলিয়াস কাঞ্চনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনি যে বিদেশিদের কাছ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে কোটি কোটি টাকা নিয়ে আসছেন। আপনি কয়টি প্রতিষ্ঠান করেছেন, কয়েকটি স্কুল করেছেন, কয়জন মানুষকে ট্রেনিং দিয়েছেন- আমি তার তথ্য বের করতেছি।
“ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান, সেখান থেকে কত টাকা নিজে নেন, পুত্রের নামে নেন, পুত্রবধূর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নেন সেই হিসেব আমি জনসম্মুখে তুলে ধরব।”
গত মাসে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের ঘোষণা এলে পরিবহন শ্রমিকরা যে আন্দোলন করেন, সেখানে কোথাও কোথাও ইলিয়াস কাঞ্চনের নামেও বিষোদগার করা হয়। তার ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে কিংবা কুশপুতুলিকা তৈরি করে তাতে জুতার মালা দেওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে দেখা যায় বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
ওই ঘটনার জন্য ইলিয়াস কাঞ্চন পরিবহন শ্রমিক-মালিক সংগঠনের নেতাদের দায়ী করেছিলেন বলে বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়।
এরপরে এ বিষয়ে আর কথা না হলেও রোববার তার বিরুদ্ধে উচ্চকিত হলেন শাজাহান খান।
“আমরা তলে হাত দিয়ে দেখতে পারি, আপনার ওজনটা কোথায়,”ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে বলেন তিনি।
সড়কে শৃঙ্খলা না থাকার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র দিকে অভিযোগ তোলেন শাজাহান খান।
তিনি বলেন, “একটু তলে হাত দিয়ে দেখেন সমস্যটা কোথায়, সমস্যা ড্রাইভার না, সমস্যা আমাদের শ্রমিক না, মূল সমস্যা বিআরটিএ। যতক্ষণ পর্যন্ত বিআরটিএ’র সক্ষমতা না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত সড়কে পূর্ণাঙ্গ শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।”
মাদারীপুরের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, “সড়ক নিরাপদ করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তবে তা হতে হবে বাস্তবমুখী।”
নতুন সড়ক পরিবহন আইনের পরিবর্তন দাবি করে তিনি বলেন, “বর্তমান আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে, যা চালকদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে হতে হবে। একটি পক্ষ একতরফাভাবে চালকদের শাস্তির দাবি করে আসছে। কিন্তু অন্য যারা জড়িত ওই বিভাগকে আড়াল করে চলেছে।
“সড়ক নিরাপদ করতে হলে সড়কের আধুনিকায়ন ও সংস্কার, প্রকৌশল ত্রুটি রোধ, পথচারী, যাত্রী পুলিশসহ সকলকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”
ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর নবী সিমুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর হায়দার চৌধূরী, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামরুল আহসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
শাজাহান খানের কাছে প্রমাণ দাবি
ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে তার এই বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতে শাজাহান খানকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, নিসচা। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে শাজাহান খানের মিথ্যাচারে নিসচা বিস্মিত, হতবাক। শাজাহান খান নিরাপদ সড়ক চাই'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পর্কে জঘন্যতম একটি মিথ্যাচার করেছেন।”
বিবৃতিতে সড়ক পরিবহন আইনের বিপক্ষে শাজাহান খানের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নিসচা। এতে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইনকে ‘বাধাগ্রস্ত করতেই’ শাজাহান খান এসব প্রশ্ন তুলেছেন।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুগপোযুগী সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়নে নির্দেশ দিলেন তখন কী করে শাজাহান খান সরকারে থেকে এই আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সেই প্রশ্ন জাতির কাছে রাখছি।”
পরিবহন সেক্টরে বছরে বিভিন্ন খাতের নামে যে টাকা আদায় করা হয় সে টাকার কত অংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে, শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে কয়টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, কয়টি হাসপাতাল, কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কয়টি আবাসন করা হয়েছে- সে প্রশ্ন শাজাহান খানকে করেছে নিসচা।