টিউলিপের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ব্যাখ্যা দিল বিএনপি

বিএনপি সরকার আমলে ডাচ কোম্পানি টিউলিপ কম্পিউটার্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ব্যাখ্যা দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 01:13 PM
Updated : 2 Dec 2019, 01:15 PM

দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ আমলে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি বাংলাদেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ হওয়ায় বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে তা বাতিল করেছিল।

ওই চুক্তি বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য হাজির করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের সরকার আমলে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানিটির সঙ্গে কম্পিউটার সরবরাহের চুক্তি হয়েছিল। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তা বাতিল করা হয়।

শেখ হাসিনা গত ২৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ওই কোম্পানির নাম হওয়ায় প্রতিহিংসার বশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ওই চুক্তি বাতিল করেছিল। আর এর কারণে বাংলাদেশকে ৩২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল।

চুক্তি বাতিলের ব্যাখ্যায় রিজভী বলেন, “টিউলিপ কোম্পানির সাথে করা চুক্তিটি ছিল দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির একটি খারাপ নজির।”

বিএনপি সরকার গঠনের পর ওই চুক্তি বাতিলের পেছনে তিনটি কারণ দেখান তিনি। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের তুলনায় দ্বিগুণ মূল্যে কম্পিউটার কেনার এই চুক্তি করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, চুক্তির শর্তাবলির সবই ছিল ডাচ কোম্পানির পক্ষে। তৃতীয়ত, চুক্তির শর্তানুযায়ী নেদারল্যান্ডস অনুদানের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশকে দেয়নি।

ওই চুক্তি বাতিলের পর বিএনপি আমলে অন্য দেশ থেকে প্রায় অর্ধেক দামে কম্পিউটার আমদানি করা হয়েছিল বলে দাবি করেন রিজভী।

ওই চুক্তি বাতিলের কারণে বিএনপি আমলে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের অভ্যন্তরীণ আদালতের রায় অনুযায়ী বিএনপি সরকার এবং পরবর্তীতে জরুরি অবস্থার সরকার, কেউই ক্ষতিপূরণ দেয়নি।

“সিদ্ধান্ত ছিল, আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আইনি লড়াই ছেড়ে দিয়ে টিউলিপ কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেয় রাষ্ট্রীয় অর্থে। অথচ বাংলাদেশ ডাচ সরকারের কাছ থেকে একটি টাকাও পায়নি, একটি কম্পিউটারও নয়।”

ওই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ১০ হাজার কম্পিউটার দেওয়ার কথা ছিল টিউলিপের। যার অর্ধেক দাম নেদারল্যান্ডস সরকার দিতে চেয়েছিল বলে শেখ হাসিনা জানান।

চুক্তি বাতিলের পর আইনি লড়াইয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “টিউলিপ কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল। সেই মামলায় বাংলাদেশ হারল। ১০ হাজার কম্পিউটার তো গেলই, ৩২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে হল।

“এক নামের প্রতি খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশের ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিল। আর টিউলিপকে যে টাকাটা আমরা দিয়েছিলাম, তাও গেল। এভাবে সমস্ত লোকসান হল।”

রিজভী বলেন, “আমাদের প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রীর এই গালগল্পের সূত্র কী? তাকে কে বলেছে বেগম খালেদা জিয়া নামের মিলের কারণে চুক্তি বাতিল করেছিলেন? এই আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে নিজেদের অবৈধ সত্তা এবং মহাসমারোহে দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিকে আড়াল করতে চান।”

ওই চুক্তি নিয়ে বিএনপি নেতা আরও বলেন, “২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার ওই কোম্পানির লোকদের ২ মিলিয়ন ১৩০ হাজার ইউরো বা ২৩ কোটি টাকা পৌঁছে দেন কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে।

“জরিমানার নগদ টাকা ছাড়াও মামলা চালানোর খরচ ও অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার নেদারল্যান্ডস সফরে সরকারি তহবিল থেকে আরও খরচ হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ কোটি নগদ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।”

শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের সরকারের সময়কার ইআরডি সচিব মসিউর রহমান (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) ‘গোপনে গলদপূর্ণ’ ওই চুক্তি করেছিলেন বলে দাবি করেন রিজভী।

তিনি বলেন, তৎকালীন মন্ত্রিসভা কমিটি কঠিন শর্ত মেনে ওই চুক্তিটি করার জন্য মসিউর রহমানকে দায়ী করেছিল।

রিজভী বলেন, “২০০৪ সালের ৭ জুন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির প্রধান হিসাবে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, তারা আমাদেরকে টাকা দেয়নি, কম্পিউটারও দেয়নি। তবে আমরা কেন তাদের দেশের আদালতের রায় অনুযায়ী তাদেরকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেব?”

টিউলিপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল নিয়ে সমালোচনার জবাবে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিফোন শিল্প সংস্থার দোয়েলকম্পিউটার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা।

রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রকল্প মানেই দুর্নীতির মহাধুমধাম। আপনাদের মনে আছে তারা (সরকার) ২০১২ সালে একবার দোয়েল কম্পিউটার নামে একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছিল। সেই দোয়েল কোথায় উড়ে গেছে, তা জনগণ কিছুই জানে না।”