খালেদার ‘প্রতিহিংসায়’ গচ্চা টাকা, কম্পিউটার: প্রধানমন্ত্রী

খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার কারণেই দেড় যুগ আগে চুক্তি করেও নেদারল্যান্ডসের ‘টিউলিপ’ কোম্পানির কম্পিউটার না নেওয়ায় সরকারকে ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2019, 11:31 AM
Updated : 28 Nov 2019, 12:00 PM

শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের (বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে) সঙ্গে কোম্পানির নামের মিল থাকায় খালেদা ওই কাজ করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬-২০০১) মেয়াদে তার সরকারের সময় কম্পিউটারের ওপর সব ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে কম্পিউটার শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন।

মেয়াদের শেষ দিকে নেওয়া ওই প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এখানে একটা দুঃখজনক ঘটনা না বলে পারছি না। আমরা চাইলাম কম্পিউটার আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেব। আমার আগ্রহ দেখে নেদারল্যান্ডস গভর্নমেন্ট এগিয়ে এলো।

“তারা আমাকে বলল তারা আমাদের অর্ধেক দামে.. অর্ধেক তারা অনুদান দেবে, অর্ধেক দাম আমরা দেব। সেইভাবে দশ হাজার কম্পিউটার তারা আমাদেরকে দেবে। আমাদের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাও আসলো। তারাও অর্থ সহায়তা দিল। এই কম্পিউটার কিনব বলে নেদারল্যান্ডস সরকারের সাথে আমাদের চুক্তি হয়ে গেল। তারা সমস্ত কিছু দেবে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেল, টাকা পয়সা দিয়ে দেওয়া হল।”

এর কিছুদিন পরই ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলে সরকারে আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।     

শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা জানেন, নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল হচ্ছে টিউলিপ। টিউলিপ ফুলটা ওদের দেশে খুব ভালো হয়। খালেদা জিয়াকে বুঝালো আমরা যে কোম্পানির (কম্পিউটার) কিনব, সেই কোম্পানির নাম টিউলিপ। এই টিউলিপ নাম নিয়ে হল বিভ্রান্ত।

“কি বিভ্রাট? সেটা হল খালেদা জিয়াকে বোঝানো হল যে শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ, নেদারল্যান্ডসের ওই কোম্পানি, ওটার নামও টিউলিপ। যেহেতু এই কোম্পানির নাম টিউলিপ কাজেই ওদের থেকে কম্পিউটার নেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র এখানে অপরাধটা হল শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ আর নেদারল্যান্ডের কোম্পানির নাম টিউলিপ। সেজন্য সেটা বন্ধ করে দিল।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল। সেই মামলায় বাংলাদেশ হারল। দশ হাজার কম্পিউটার তো গেলই, ৩২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে হল। এক নামের প্রতি খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশের ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিল। আর টিউলিপকে যে টাকাটা আমরা দিয়েছিলাম তাও গেল। এভাবে সমস্ত লোকসান হল।”

“বাংলাদেশ আমরা যতটুকু এই ডিজিটাইজড করার ব্যবস্থা বা কম্পিউটার শেখানোর ব্যবস্থা করে গিয়েছিলাম সেটা ওখানেই বলতে গেলে থেমে গেল,” বলেন সরকারপ্রধান।

২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণার কথা স্মরণ করে বিএনপির সাবেক এক মন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ছিয়ানব্বই সালে যখন সরকারে এসেছিলাম তখন দেখতাম কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করে না। মোবাইল ফোন তো কারও হাতে ছিলই না। বিএনপি সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন তার মোবাইল ফোনের ব্যবসা ছিল বলে ওই একটা কোম্পানিই ব্যবসা করত। বাংলাদেশ আর কোনো কোম্পানি ব্যবসা করতে পারবে না- এটা একটা অলিখিত অঘোষিত ঘটনা। 

“তার সেই মোবাইল ফোনটা বিশালাকারের এক ফোন..আর সেটা শুধু ঢাকা-চট্টগ্রামে। কারণ ওই ভদ্রলোকের বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যেই সংযোগ ছিল আর কোথাও ছিল না। এই ধরনের একটা অবস্থা ছিল।

সেই সময় বাংলাদেশে একমাত্র মোবাইল ফোন অপারেটর ছিল সিটিসেল, যার অন্যতম মালিক ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান। দেনার দায়ে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় সিটিসেল।

ছিয়ানব্বই সালে সরকারে এসে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাশাপাশি কম্পিউটার..কম্পিউটার কেউ তখন ব্যবহারই করত না। অনেক অফিসে একটা ডেক্সটপ সাজিয়ে রাখা হত। কিন্তু কেউ ওটায় হাত দিত না এমন একটা অবস্থা ছিল।”

শেখ হাসিনা ওইসময় নিজের ছেলে বর্তমানে তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শের কথাও জানান।

“আমাকে সজীব ওয়াজেদ জয় বলল তুমি যদি এটা (ডিজিটাল বাংলাদেশ) করতে চাও মা, তাহলে (কম্পিউটার ও কম্পিউটার সরঞ্জামের ওপর) ট্যাক্স কমিয়ে দিতে হবে। এটার দাম কমাতে হবে এবং শিক্ষার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। 

“২০০৯ এ আবার সরকারে আসার পর আমরা উদ্যোগ নিলাম। আজকে সারা বাংলাদেশে আমরা যেটা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব সত্যিই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।”

বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হল- চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কাপ্তাইয়ে লেকে স্থাপিত ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী (রিসার্চ ভেসেল), গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ‘ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের অধীনে প্রদত্ত সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন পাঁচটি জাহাজ।

এ সময় শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় সুবিধাভোগী, শিক্ষার্থী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।       

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।