‘টর্চার সেলের’ সাথে পরিচিত নয় ছাত্রলীগ, দাবি সাধারণ সম্পাদকের

আবরার ফাহাদ হত্যার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বুয়েটের বিভিন্ন হলের কক্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 08:35 AM
Updated : 10 Oct 2019, 04:28 PM

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মৌন র‌্যালি শেষে বৃহস্পতিবার দুপরে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।

লেখক ভট্টাচার্য্য বলেন, “টর্চার সেলের সাথে ছাত্রলীগ পরিচিত নয়। টর্চার সেলের নামও ভালোভাবে জানে না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একটি মহল চক্রান্ত করে ছাত্রলীগের সাথে টর্চার সেলকে জড়াচ্ছে।”

গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়।

ওই কক্ষের আবাসিক ছাত্র বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ সম্পাদক অমিত সাহা, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার দিনভর বুয়েটে তদন্ত চালিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, পরে গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিনজনকে। বৃহস্পতিবার অমিতসহ আরও দুজন গ্রেপ্তার হয়।

এদিকে আবরার হত্যার পর বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অতীতের বিভিন্ন নির্যাতনের কথা উঠে আসছে। তাতে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বরসহ বিভিন্ন হলের একাধিক কক্ষ ও কমনরুমকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

২০১৭ সালের ৩১ মার্চ খোলা একটি ওয়েবপেইজে গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত র‌্যাগিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৬৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, র‌্যাগিংয়ের নামে বুয়েটে নির্যাতন আর অপমানের ঘটনা ঘটে হরহামেশাই। ভিন্ন মতের অনেককে শিবির নাম দিয়ে নির্যাতনের ঘটনাও আছে অনেক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘জেনেও’ নির্যাতন ঠেকাতে উদ্যোগী হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।

এর আগে র‌্যালি শেষে সমাবেশে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, ‘বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ছাত্রলীগে ‘ঢুকে পড়া অনুপ্রবেশকারীরা’ই নানা অপকর্ম করছে।

তিনি বলেন, “আমরা তাদের খুঁজে বের করব। সাংগঠনিকভাবে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি আমরা সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করছি।”

গত ৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতার ‘মাথায় পিস্তল ঠেকানোর’ অপরাধে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে দুই শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান তুষার ও আবু বকর আলিফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

লেখকের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের উপকমিটি থেকে বহিষ্কৃত এই দুই শিক্ষার্থী এখন ভিপি নুরুল হক নূরের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে ‘অপকর্ম করছে’।

তিনি বলেন, “বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে বহিস্কৃত দুই শিক্ষার্থী এখন ভিপি নূরের আশ্রয়ে বিভিন্ন হলে অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তার ছত্রছায়ায় তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত ছিল।”

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সমাবেশ দাবি করেন লেখক।

সমাবেশে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “কোনো ব্যক্তির অপরাধ ও অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না। ছাত্রলীগের সুনাম নষ্টকারী যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব আমরা।”

ছাত্রলীগের সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও যোগ দেন। যোগ দেয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

মৌন র‌্যালিটি পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে কলা ভবন, টিএসসি মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ফুলার রোড ঘুরে ভিসি চত্বরে এসে শেষ হয়।