গোটা দেশটাই আজ টর্চার সেল: রিজভী

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদকে হলের কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় খুনিদের ব্চিারের দাবিতে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, সরকার গোটা দেশটাকে ‘টর্চার সেলে’ পরিণত করেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 08:17 AM
Updated : 9 Oct 2019, 08:17 AM

বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিটি দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি।”

একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র বুয়েট ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছে দলটি।

রোববার রাতে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে এই কক্ষেই ডেকে নিয়ে গিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারাসহ মোট ১৯ জনের নামে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন আবরারের বাবা।

রিজভী বলেন, আবরার ফাহাদকে মারার সময়ে অমিত সাহা উপস্থিত ছিল, সে মারামারিতে অংশ নেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অন্যরা আবরারের লাশ নিয়ে গেলেও অমিত তার রুমেই ছিল।

“অথচ সেই অমিত সাহার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এজহারেও তার নাম নেই, তাকে বহিষ্কারও করেনি ছাত্রলীগ। বরং তাকে বাঁচাতে বুয়েট প্রশাসন ও বির্তকিত পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।”

ওই কক্ষের ভেতরে আবরারের ওপর নির্যাতনের খবর পেয়েও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক বলেন, “গোটা দেশটাকে এখন একটা টর্চার সেলে পরিণত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এখন কন্সেট্রেশন ক্যাম্প। ছাত্র-যুবক-অবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই এখন লীগের টর্চারের সেলের নির্মম শিকার।”

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের কার্যালয়ে ‘টর্চার সেল’ পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

তিনি বলেন, অমিত সাহার কক্ষটিও একটি টর্চার সেল। এদিকে চলছে গুম-খুন-অপহরণ আর বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, আরেক দিকে রয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের টর্চার সেল। এই টর্চার সেলগুলোই ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের গর্ভে জন্ম নেওয়া বর্তমান সরকারের শক্তির উৎস।

রিজভী বলেন, “আবরারের স্ট্যাটাসের পেছনে কারণ ছিল- দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা ও সত্য ইতিহাস তুলে ধরা। আমরা যতটুকু পড়েছি, সেখানে সেটিই দেখিছি।”

আবরার ফাহাদকে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করে রিজভী বলেন, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়ে মৃত্যুকে জয় করেছে। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধের প্রধান প্রেরণা হয়ে থাকবে আবরার ফাহাদ। সে আমাদের প্রাণের পতাকা।”

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের এলপিজি গ্যাস রপ্তানির চুক্তি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের ব্যাখ্যার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ভারত নিজেই তো গ্যাস এনে প্রক্রিয়াজাত করতে পারে।

“প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাশ হতে হলো আবরার ফাহাদকে। চুক্তি বাতিল করে প্রমাণ দিন- আপনি আবরারের পক্ষে, ভারতের আবদারের পক্ষে নন।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কবীর মুরাদ, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, সেলিমুজ্জামান সেলিম এসময় উপস্থিত ছিলেন।