আ.লীগ-যুবলীগ নেতাদের ঘরই এখন ব্যাংক: রিজভী

দেশের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ঘরে ঘরে ‘ব্যাংক ও টাকশাল’ গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2019, 10:10 AM
Updated : 23 Sept 2019, 10:44 AM

সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানী ও চট্টগ্রামে ক্লাবগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান শুদ্ধি অভিযান ‘আইওয়াশ’ কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও হরিলুটে গোটা দেশটা ‘ফাঁপা-ফোকলা’ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ইতিবাচক আলোচনায় থাকতেই হঠাৎ শুরু হওয়া অভিযানটি ‘আইওয়াশ’ কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

“লোক দেখানো অভিযানে অধরাই থেকে যাচ্ছেন মাদক ও দুর্নীতিবাজদের গডফাদাররা। প্রশ্ন হলো- অঙ্গ সংগঠনের চুনোপুঁটি শামীম (জিকে শামীম) যদি ৯ হাজার কোটি টাকার সরকারি কাজ করে, তার অফিসে পাওয়া যায় শত শত কোটি টাকা, তাহলে মূল সংগঠনের নেতাদের অবস্থা কি? বড় বড় রাঘব-বোয়াল, রুই-কাতলা-মৃগেলদের কী দশা? মন্ত্রী ও তার উপরের কী অবস্থা, রাষ্ট্র কী আসলে আছে- এটা জনগণের প্রশ্ন।”

রাজধানীর ক্লাবগুলোতে জুয়ার আখড়া বন্ধে অভিযানের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিকেতনে গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে দুইশ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পেয়েছে র‌্যাব। যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি যুবলীগ পরিচয় ব্যবহার করলেও যুবলীগের শীর্ষনেতাদের দাবি, শামীম সংগঠনের কোনো পদে ছিলেন না। শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত।

গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারি কাজে তার দাপটের খবর ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তর, সচিবালয় ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ এখন শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে রয়েছে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এখন দেউলিয়া করে আওয়ামী লীগ, যুব লীগ নেতাদের ঘরে ঘরে এখন ব্যাংক, টাকশাল বানানো হয়েছে। বিদেশে লাখ লাখ কোটি টাকা পাঁচার করছে, পাচারের পর উদ্বৃত্ত টাকা থেকে যাচ্ছে ঘরে।

“দেশটাকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতার আক্ষেপের সেই ‘চাটার দল’। সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের চুনোপুঁটি নেতারা আঙ্গুল ফুলে একেকটা বটগাছ হয়ে গেছে।

রিজভী বলেন, “উন্নয়নের নামে সরকারি প্রজেক্ট নেওয়া হয় ৫-১০ গুণ খরচে প্রাক্কলন করে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের মন্ত্রণালয়ে চলছে মহাদুর্নীতি। ফোর লেইন রাস্তা নির্মাণে বিশ্বের কোথাও প্রতি কিলোমিটারে ২৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হয় না। সেখানে ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহনমন্ত্রী) সাহেব এক কিলোমিটারের খরচ করছেন ২০০ কোটি টাকা।

“এই একটি মাত্র নম্বরই বলে দিচ্ছে রাঘব-বোয়ালদের লুটপাট হচ্ছে কি মাত্রায়। চুনোপুঁটিরা লুটপাটের ছিটেফোঁটা পেয়ে যদি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়, তবে বড় নেতারা যে লুটের কুমির তা বুঝতে আর দেশবাসীর বাকি নেই।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “জিয়াউর রহমান এদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশালের প্রবর্তক। সুতরাং জিয়াউর রহমান ও বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের মৌলিক পার্থক্য আছে। বিএনপি মানে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিএনপি মানেই জবাবদিহিতা।

“আওয়ামী লীগ মানে ক্যাসিনো, আওয়ামী লীগ মানে শত শত, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার। দুর্নীতির ডাক নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান খায়রুল কবির খোকন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।