সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা: বিচারের অপেক্ষায় দেড় যুগ

ঢাকার পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যার বিচার দেড় যুগেও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির নেতারা।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2019, 10:36 AM
Updated : 1 Dec 2019, 02:03 PM

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, “আওয়ামী লীগ বা বিএনপি- কোনো দলই চায় না যে বামপন্থিদের ওপর ওই হামলার সুবিচার হোক।”

ওই বোমা হামলার ১৮ বছর পূর্তির দিন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা বলেন সেলিম।

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন এবং পরে একজন হাসপাতালে মারা যান।

নিহতরা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটার হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস।

সেসময় সিপিবির সভাপতি ছিলেন মনজুরুল আহসান খান, তিনিই মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।

দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেন। তিনি আদালতকে বলেন, তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে ২০০৫ সালে আবার মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।

২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচারের পর্যায়ে আসা মামলা দুটি বর্তমানে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

দুই মামলার ১০৭ জন সাক্ষীর মধ্যে হত্যা মামলায় ২৮ জন এবং বিস্ফোরক মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের মধ্যে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মনজুরুল আহসান খান, রুহিন হোসেন প্রিন্স, আসলাম উদ্দিনও রয়েছেন। 

অভিযোগ গঠনের পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার না এগোনোর কারণ জানতে চাইলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, “সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসছে না। দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে আসামিদেরও আনা হয় না।”

তিনি বলেন, “এর দায় তো পুলিশের । আমরা তো গিয়ে সাক্ষীদের হাতে ধরে আদালতে নিয়ে আসি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখব। তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে আনা হবে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য।”

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর ওই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাচ্ছি না এটা ভুয়া কথা। এ মামলায় আমাদের নেতা মনজুরুল আহসান খান, আমিসহ পার্টির সবাই সাক্ষ্য দিয়েছি। আসলে রাষ্ট্রপক্ষের ওই দলগুলো নিজেদের স্বার্থেই এ মামলার বিচার চায় না।”

এই বাম নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরা কেবল সেই সব মামলার বিচার চায়, যেগুলো ‘ক্ষমতার প্রয়োজনে’ দরকার হয়।

বিএনপির সময়ে এ মামলার আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে মামলার কার্যক্রম যে স্থগিত করা হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সিপিবি সভাপতি বলেন, “পরে আন্দোলনের মুখে মামলার তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল।”

মামলার নথি থেকে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি এ মামলার শুনানির নির্ধারিত তারিখে কোনো সাক্ষী আদালতে যাননি। কারাগারে থাকা আসামিদের কাউকে পুলিশ আদালতে হাজির করেনি।

এ কারণে মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস এ মামলার শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করে দেন। সেই সঙ্গে আসামিদের আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট এবং সাক্ষীদের জন্য সমন ও জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। প্রায় দুই বছর পর ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ তিনজনের হাজিরা আদালতে দাখিল করলেও সেদিন আসামিদের আদালতে না আনায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।

২০১৫ ও ২০১৬ সালে এ মামলার শুনানিতে কিছুটা গতি থাকলেও গত আড়াই বছরে বিচার আর এগোয়নি। 

দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা আবদুল হান্নান ওরফে মুফতি হান্নানকে ২০১৭ সালে অন্য একটি মামলায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

বাকি আসামিদের মধ্যে মাইনুদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ও মশিউর রহমান কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে মাইনুদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এছাড়া আব্দুল হাই, শফিকুর রহমান, নূর ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মুহিবুল্লাহ মুত্তাকীন, আনিসুল ইসলাম মোরসালীন ও রফিকুল ইসলাম মিরাজ পলাতক রয়েছেন।