জাতীয় ঐক্যের চাপে সংলাপে বাধ্য হবে সরকার: মওদুদ

যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপির উদ্যোগে সৃষ্ট জাতীয় ঐক্যের চাপে বাধ্য হয়ে সরকার একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপে আসতে বাধ্য হবে বলে দাবি করেছেন মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2018, 03:37 PM
Updated : 12 Oct 2018, 03:37 PM

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ‘সরকার পতনের লক্ষ্যে শিগগির জাতীয় ঐক্যের আন্দোলনের রূপরেখা’ ঘোষণা করা হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

মওদুদ বলেন, “জাতীয় ঐক্যে আমরা মনে করি, সরকার বাধ্য হবেন সংলাপে আসতে। সরকার যত কথাই বলুক না কেন, যত পোস্টার লাগাক না কেন, যত ট্রেন জার্নি, যত পদযাত্রা করুক, যত নির্বাচনী প্রচারণা করুক, যতই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিক না কেন অবশ্যই তাদের সংলাপে আসতে হবে।

“আমরা অতি শিগগিরই এর (জাতীয় ঐক্য) একটা রূপরেখা দেবে, জাতীয় ঐক্যের আন্দোলনের কাঠামো ঘোষণা করব। জাতীয় ঐক্যের রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন, এই সরকার পরিবর্তনে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, আসম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমানের মান্নার নাগরিক ঐক্যের নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপি যুক্ত হয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছে।

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সংসদ ভেঙে দেওয়া, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ভোট না নেওয়ার ৫ দফা দাবি নিয়ে এই ঐক্য হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে ভোট টানতে সরকার বিভিন্ন পেশার মানুষকে খুশি করার জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, “এদের ৮০ ভাগ মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যায়, ভোটটা যে তারা নৌকাতে দেবে না- এটা তো তারা জানে না।”

দুর্নীতির মামলা কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় আসবে না মন্তব্য করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, “.. বেগম জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ- এই রাজপথেই তার ‍মুক্তি আনতে হবে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলায় তারেক রহমানের সাজা বাতিলসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।

সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘ড্রাকোনিয়ান’ আইন আখ্যায়িত করে মওদুদ বলেন, “নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমের কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য, গণমাধ্যম যাতে সরকারের সমালোচনা না করতে পারে, তারা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের কর্তৃব্য পালন করতে না পারে সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার।

“সাত-আটটা ধারা আছে যা সম্পূর্ণভাবে সংবিধানপরিপন্থি, বিশেষ করে ৩২ এবং ৪৭ ধারা। ৩২ ধারা অনুযায়ী, আপনি যদি সরকারের তথ্যের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে খবর ছাপান; সরকারের দুর্নীতি, অপকর্ম, অনিয়মের খবর ছাপান তাহলে আপনাদের ১৪ বছরের সাজা ও ২৫ লাখ টাকার জরিমানা হবে। এটা একটা ড্রাকোনিয়ান আইন- সম্পূর্ণভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করার জন্য এই আইন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ৪৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রক্ষীবাহিনীকে এই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। বিনা পরোয়ানায় পুলিশ যে কোনো বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে; গ্রেপ্তার করতে পারবে কোনো মামলা ছাড়া।

“পুলিশ আপনার বাড়ি থেকে কম্পিউটারসহ ইলেক্ট্রনিক সব কিছু নিয়ে যেতে পারবে তাদের কোনো তালিকা দিতে হবে না।”

এই আইনের বিরুদ্ধে ‘সাংবাদিকদের মধ্যে সংঘবদ্ধ ঐক্য নেই’ বলে খেদ প্রকাশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা তো বলেছি, আমরা ক্ষমতায় গেলে সাত দিনের মধ্যে এই আইন বাতিল করব।”

জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. আব্দুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক এস এম হাসান তালুকদার, অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও ড. দেলোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন।