মঙ্গলবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মাদক অভিযানের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যার যে হিড়িক চলছে, এর গভীরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে মাদক বিরোধীদের নির্মূল করতে যেয়ে টার্গেট করে বিরোধী দলের তরুণ নেতাকর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে মেরে ফেলা।”
মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে গত চার দিনে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই নিহত হয় ১১ জন।
রিজভী বলেন, “গতরাতে নেত্রকোণায় কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে ছাত্রদলের সদস্য আমজাদ হোসেনকে। আমি সেখানকার অনেকের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছেন যে আমজাদ অত্যন্ত ভালো ছেলে। মাদক কি, ধূমপানেও সে জড়িত নয়।”
তিনি আরো বলেন, “মাদকবিরোধী অভিযানে কাদেরকে ধরা হচ্ছে? গডফাদারদের নয়, চুনোপুটিদের। সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাড়ে নয বছরে সারাদেশ মাদকে ছেয়ে গেছে। গোটা যুব সমাজকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে মাদকের বিস্তার ঘটানো হয়েছে।
“এর পেছনে দায়ীরা হলেন সরকার দলীয় বদির (সংসদ সদস্য) মতো রাঘব বোয়ালরা। তাদের ধরছে না কেন? এ থেকে সরকারের আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। আমি বেআইনি ক্রসফায়ারে হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। সকল বিচার বহির্ভূত হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। একই সঙ্গে সকল দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজকে গুম-খুন-বিচার বহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর বনানীর গভীর রাতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাহেব বাজারের মার্কেটে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে টানানো শুভেচ্ছা ব্যানার খুলে ফেলা ও মেয়রের সঙ্গে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণের নিন্দা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হায়দার আলী, কবীর মুরাদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘বিচার বহির্ভূত হত্যা’ নিয়ে প্রশ্ন
মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
দুপুরে এক আলোচনায় সভায় তিনি বলেন, “সারাদেশে মাদক অভিযানের নামে তারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করছে। একদিনে ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। দেশে কী কোনো আইন নেই? যদি মাদক ব্যবসায়ী হয়, যদি কোনো মাদক ব্যবহারকারী হয়, যেকোনো অন্যায়কারী হয় তাহলে এদেশে বিচারের ব্যবস্থা আছে, আইন আছে, আমাদের সংবিধান আছে। সেটাকে ভ্রুক্ষেপ করছে না এই সরকার।
“মাদক অভিযানের নামে আজকে যাদেরকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে আমরা জানি না আসলে তারা কারা? তারা কী বিরোধী কন্ঠস্বর না তারা আসলে মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী। এটা দেখানোর জন্য, প্রমাণ করার দরকার ছিল কোর্টে- তারা কারা ? কোনো সভ্য দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
বিএনপি মাদকের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে আপনাদের এমপি থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশ যাকে মাদকের সম্রাট জানে, প্রথমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, মাদক সম্রাটের আশপাশেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আমি দাবি করতে চাই- ঢাকায় মাদকের যারা মূল নায়ক তাদের নাম প্রকাশ করুন। এটা প্রকাশ করা হলে দেখা যাবে তারা কোনো না কোনো আওয়ামী লীগের নেতা, কোনো না কোনো কর্মী হবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।