বছরের শেষভাগে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তারা নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি স্থগিত করা হয়েছে অনিয়মের অভিযোগের কারণে। এর বাইরে আরও কিছু কেন্দ্রে সিল মেরে বাক্স ভরার চেষ্টা এবং বিএনপির প্রার্থীদের প্রচার ক্যাম্পে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুলনা সিটি নির্বাচন ভালো কিংবা খারাপ বলব না। কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু ফল পাল্টে দেওয়ার মত কোনো অনিয়ম দেখিনি।”
তিনি বলেন, সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি ভোটের পর জনগণের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল, আস্থাও বেড়েছিল।
“রংপুরের এর ধারাবাহিকতা রাখা উচিত ছিল। তা না হওয়ায় কিছুটা হতাশা রয়েছে সবার মাঝে,” বলেন ইডব্লিউজি পরিচালক।
এ মেয়াদে ৩০ মার্চ কুমিল্লা এবং ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি ভোট হয় কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে। তাতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয় পান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের ফলাফল ও পরিবেশকে জাতীয় নির্বাচনের মানদণ্ডে তুলনা করা ঠিক হবে না। সামনে আরও সিটি নির্বাচন রয়েছে, ত্রুটি সংশোধনের সুযোগও নির্বাচন কমিশনের সামনে আছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতীতে আমরা আরও খারাপ নির্বাচন দেখেছি। সহিংসতা ও গোলযোগও ছিল সেখানে। কিন্তু খুলনার ভোটে অনিয়মে মাত্র তিনটি কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে। সার্বিক বিচারে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ক্ষমতা প্রয়োগ ও সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখাতে আরও সতর্ক হতে হবে সরকার এবং কমিশনকে।
খুলনায় অনিয়মের অভিযোগ এবং ইসির নেওয়া ব্যবস্থার নেওয়ার বিষয়ে মুনিরা খান বলেন, তাদের পর্যবেক্ষকরা ৮০টি কেন্দ্র দেখেছেন। সেখানে ‘৩-৪টি’ কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট পাননি তারা। ‘দুই-এক জায়গায়’ অনিয়ম হয়েছে, ভোট স্থগিতও হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ২৩৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সে হিসাবে শেষ পর্যন্ত ‘বড় ধরনের’ ঘটনা ঘটেনি বলেই মনে করছেন ফেমার প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, কুমিল্লা, রংপুর ও খুলনার ভোটে তিনটি রাজনৈতিক দল ভালো ফল করলেও আগামীতে ফলাফলের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে- এমন মনে করারও কোনো কারণ নেই।
“ভোটে অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। দলীয় প্রতীক, যোগ্য প্রার্থী ও স্থানীয় প্রভাব। খুলনায় প্রধান দুই প্রার্থী বা অন্যরাও বেশ ভালো। আগামীতেও দলগুলোকে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে হবে।”
খুলনায় তিনটি কেন্দ্র স্থগিত হলেও সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ভোটের পর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোয় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। চমৎকার, সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনায় নির্বাচন হয়েছে।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনার এমন ভোট জনমনে আস্থা কিংবা শঙ্কা বাড়াবে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে এ নিয়ে মন্তব্য করব না। সবার নজর খুলনার দিকে। এটা একটা স্থানীয় নির্বাচন। তাতে যতটুকু হয়েছে তাতে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট।”
কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের এই প্রতিক্রিয়া ইসি সচিব সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এদিন গণমাধ্যমের সামনে আসেননি। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সাংবাদিকরা তার দেখা পাননি।
অথচ আগের দুটি সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে সিইসি সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন, নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি বিভন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
কুমিল্লার ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, “সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছি। আমরা দাবি করি, এ নির্বাচনে আমরা সফল ও সার্থক হয়েছি।”
আর রংপুরের ভোট শেষে উচ্ছ্বসিত সিইসি বলেছিলেন, ওই সিটি ভোটের ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশ ভবিষ্যতের জন্য ‘মডেল’ হয়ে থাকবে।
কমিশনের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পর্যবেক্ষকরা যে ‘ধারাবাহিকতা না থাকার’ কথা বলছেন, তার পাশাপাশি গাজীপুরের ভোট পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সিইসির গণমাধ্যমের সামনে না আসার কারণ হতে পারে।
খুলনার পর বাকি থাকছে চার সিটির ভোট। ৪ সেপ্টেম্বর গাজীপুর, ৮ অক্টোবর সিলেট, ৫ অক্টোবর রাজশাহী এবং ২৩ অক্টোবর বরিশালের মেয়াদ ফুরাচ্ছে।
আগামী নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেজন্যে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ সিটির ভোট শেষ করার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সিইসি নূরুল হুদা।