তারেককে আনতে পারবেন না: সরকারকে মোশাররফ

বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডিত তারেক রহমানকে ফেরত আনতে সরকার আশাবাদী হলেও তাতে সফলতা আসবে না বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2018, 01:55 PM
Updated : 26 April 2018, 01:56 PM

তারেক যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন দাবি করে তিনি বলেছেন, “তারেক রহমানকে আপনি (সরকার) ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। তিনি (তারেক রহমান) ফিরে আসবেন বাংলাদেশে বীরের বেশে, যখন বাংলাদেশের জনগণ চাইবে। শেখ হাসিনার চাওয়া না চাওয়ার উপর এর কোনো সম্পর্ক নেই।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় একথা বলেন খন্দকার মোশাররফ।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জমা দেওয়ার খবর প্রকাশের পর তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

এর মধ্য দিয়ে তারেক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবির প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি এই প্রথম জানাল, তাদের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন।

এক দশক ধরে সপরিবারের লন্ডনে থাকা তারেক রহমান বাংলাদেশে দুটি মামলায় সাত ও ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায়ও তার বিরুদ্ধে হুলিয়া রয়েছে।

আইনের চোখে পলাতক তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সাম্প্রতিক সফরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করে হলেও তারেককে ফেরত আনা হবে।

জাতিসংঘের দুটি দেশের ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স অ্যাক্ট’র অধীনে তারেককে ফেরত আনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না দেখার কথাও জানান আইনজীবী আনিসুল হক।

তার বক্তব্যের পর বিকালে আলোচনা সভায় পাল্টা কথা বলেন ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য লন্ডনে থাকা খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “ব্রিটিশ আইনে এটা (তারেককে ফেরত আনা) সম্ভব না। তারেক রহমানকে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ আইনে লেখা আছে, পৃথিবীর কোনো শক্তি বা জাতিসংঘ রেজুলেশন করলেও ব্রিটিশ সরকার কোনো ব্যক্তিকে কখনও তার দেশে পাঠাবে না, যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি নিজে বলেন, এখন আমি আমার দেশে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়েছে।”

তারেককে ফেরত আনতে প্রধানমন্ত্রী ‘জেদ’ ধরেছেন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “উনি বললেন, তাকে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আমি বলতে চাই, আপনি যত মূল্য, যত ধমক দেন, যত কিছু করেন না কেন, ব্রিটিশ আইনে এটা সম্ভব না।”

খন্দকার মোশাররফ হোসেন, (ফাইল ছবি)

তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়েননি দাবি করে মোশাররফ বলেন, “ব্রিটিশ আইনের নিয়ম হল যখন কেউ পলিটিকাল অ্যাসাইলাম চায়, তখন তাকে পাসপোর্টটি জমা দিতে হয় সেখানকার হোম মিনিস্ট্রিতে। এটার অর্থ নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়া নয়।

“পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি নাগরিকত্ব ছাড়া থাকতে পারে না। এখানে শুধু তারেক রহমানের প্রতি রাগে ক্ষোভে এরকম বানোয়াট চিঠি দিয়ে সরকার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এটাতে তাদের (সরকার) বুমেরাং হয়েছে।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্তও দেন মোশাররফ।

তিনি বলেন, “দেশনেত্রীর মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না। যেহেতু বেগম জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র ও একাদশ সংসদ নির্বাচন একসূত্রে গাঁথা। আমাদের তাই আন্দোলন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।”

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি সদ্য প্রয়াত আবুল কাশেম চৌধুরীর স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মোশাররফ।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমও সভায় বক্তব্য রাখেন।