গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাদ দিলেন কেন: বিএনপিকে কাদের

খালেদা জিয়ার শাস্তি হবে ধরে নিয়েই বিএনপি গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে তা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2018, 05:03 PM
Updated : 15 July 2018, 12:16 PM

বিএনপির দুই নেতার ইসিতে যাওয়ার পরদিন সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে কাদের বলেন, “যখন মামলার রায় হবে, তখন মিউ করে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে। কীভাবে বের হল, রাতের অন্ধকারে এক কলমের খোঁচায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা নির্বাসনে চলে গেল!

“ফখরুল সাহেব বলুন, রাতের অন্ধকারে ৭ ধারা কোথায় পাঠালেন? সকালে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল ইসির কাছে পাঠালেন। তাহলে কি আদালতের রায় ইসির ইচ্ছা অনুযায়ী হবে? ইসি কি আদালতকে বলবে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, যদি রায় তাদের পক্ষে না আসে।”

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি ঠিক হওয়ার পর গত শনিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এরপর রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ইসিতে গিয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান জানান, বিএনপির কাউন্সিলের নানা সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে কিছু তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাতে এসেছিলেন তারা।

ইসির পক্ষ থেকে কিছু সাংবাদিকদের জানানো না হলেও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের দাবি করেন, সিইসির কাছে দেওয়া বিএনপির গঠনতন্ত্রে সপ্তম ধারাটি নেই।

“সাত ধারার প্রথমটি হচ্ছে- ক. দণ্ডিত ব্যক্তি বিএনপির কোনো নেতা হতে পারবে না, সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পাবে না, এমপি হতে পারবে না; খ. কেউ যদি দেওলিয়া হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না; গ. কেউ যদি উন্মাদ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না; ঘ. কেউ যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না।

“এবার বুঝে দেখুন, এই চারটা বিষয় আছে ৭ ধারায়, এই সাতধারা রাতের অন্ধকারে কলমের খোঁচায় বাদ দিয়ে নতুন করে গঠনতন্ত্র সম্মেলনের এক বছর ১০ মাস পর নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। তাহলে কী দাঁড়ায়?”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির এই মামলায় খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়ে তাকে ভোট থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিএনপির অভিযোগ। তারা দাবি করেছে, রায় আগেই ঠিক করে রাখা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা দাবি করছে, আদালতের উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। খালেদা জিয়ার দোষ প্রমাণিত হবে জেনেই বিএনপি তার দণ্ডের বিষয়টি আঁচ করে ফেলেছে।

কাদের বলেন, দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়া আর নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না বলে বিএনপি ‘তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে’ তাকে রাখতে চাইছে।

বিএনপির এই পদক্ষেপে দলটির অগণতান্ত্রিক চর্চার প্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

“আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ২৫০০ কাউন্সিলরের অনুমোদন ছাড়া একটা শব্দও আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। আর কী অদ্ভুত বিএনপি, কী অদ্ভুত বিএনপির গণতন্ত্র, কী অদ্ভূত তাদের গঠনতন্ত্র! ঘরেই যাদের গণতন্ত্র নেই, তারা দেশের গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবে?”

সরকার বিএনপিকে ভাঙতে চাইলে বলে দলটির মহাসচিবের অভিযোগের পাল্টায় কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব, বিএনপিকে ভাঙার জন্য আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই। বিএনপি যেভাবে নেতিবাচক, অগণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছে, বিএনপিকে ভাঙার জন্য বিএনপিই যথেষ্ট।

“মামলা-হামলার ভয়ে আজকে বিএনপি তাদের সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলেছে। বিএনপির ইমানের জোর এত হালকা, পালকের মতো হালকা ইমান! সাজা হলে দুর্নীতিবাজ আর নেতা হতে পারবে না, সেজন্য গুডবাই ৭ ধারা! এটা হচ্ছে বিএনপি।”

ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাদের। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।