ভাষা মতিন-টি আলীর আদর্শ বাস্তবায়নে ঐক্যের ডাক

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. টি আলীর আদর্শ বাস্তবায়নে বামপন্থিদের ঐক্যের ডাক এসেছে একটি আলোচনা সভা থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2017, 01:52 PM
Updated : 21 Oct 2017, 01:56 PM

এই দুজনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকালে মুক্তিভবনে এক আলোচনা সভায় বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারা এই আহ্বান জানান।

তারা বলেন, শোষণ মুক্তি আর কৃষক শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমৃত্যু নিজেদের জড়িত রেখেছিলেন আব্দুল মতিন ও টি আলী।

১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল মতিন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, সারা বাংলাদেশ যাকে চেনে ভাষা মতিন নামে। ছাত্র রাজনীতির পর থেকে আজীবন কৃষক আন্দোলনে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।

ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন

অন্যদিকে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক টি আলীও পেশার বাইরে জড়িত ছিলেন কৃষক-শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে। তিনি মারা যান ২০১৪ সালের ৩১ মে।

আলোচনা সভায় ভাসানী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, “ভাষা আন্দোলনে আব্দুল মতিনের ভূমিকা আমরা সবাই জানি। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলন ও কৃষক-শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ করেছিলেন তিনি। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়, এখন পর্যন্ত যা লেখা হয়েছে তাতে তাকে বাদ দেওয়া যায়নি।

“ভাষা মতিনকে কেবল ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি আমরা। যদিও কৃষকদের সংগঠিত করা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক জনতার নেতা হওয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, “ডা. টি আলীও কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ করেছিলেন। কৃষক মুক্তির বিষয়ে ভাবতেন সব সময়। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কৃষক মুক্তির আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি।”

ডা. টি আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, “ওনারা কী করেছেন আপনারা জানেন। আজকে ওনাদের আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তরুণ সমাজের মধ্যে যেন তাদের সেই আদর্শ ও স্বপ্ন বিরাজ করে, তাহলে সেগুলো প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব হবে।”

বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “মেহনতি মানুষের জন্য লড়াই করেছেন তারা। আমৃত্যু সৎ ও নিষ্ঠাবান থেকে তারা সে কাজ করে গেছেন। আজকে ওনাদের আদর্শ যেন বাস্তবায়ন হয়, সে লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব।”

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, “নির্বাচন নির্বাচন খেলায় সংলাপ আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। সরকার মানুষকে বাকরুদ্ধ করে রেখেছে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের মদদে আর জনগণের সরকার কায়েমের পরিস্থিতি নেই। সেই অবস্থায় কীভাবে ঐক্য করা যায় সেটা নিয়ে এখন আমাদের ভাবতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন ও ডা. টি আলীর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে আবারও বাম সংগঠনগুলোর ঐক্যের কথা এসেছে। তবে অনেক সময় ঐক্য হলেও নানা কারণে উদ্দেশ্য সাধন হয় না।

তিনি বলেন, “নানা রকম চিন্তার গাত্রদাহ, যুক্তির সংকীর্ণতা ও যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্নতার কারণে ঐক্য হয় না। এ কারণে পুঁজিবাদী ও সামাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সেভাবে প্রতিরোধ হয় নাই। দলগত চিন্তায় আবদ্ধ থাকার কারণে সমাজের ভেতরগত চিন্তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু নোমান খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, ভাসানী পরিষদের কোষাধ্যক্ষ এ এস এম কামালউদ্দিন, ডা. টি আলীর ছেলে ডা. তৌফিক আলী বক্তব্য দেন।