জাতীয় পার্টিতে আবারও ভাঙনের গুঞ্জনের মধ্যে মঙ্গলবার বনানীতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভাই জিএম কাদেরকে পাশে নিয়ে এরশাদ এই ঘোষণা দেন।
তিনি আবারও বলেন, নেতাকর্মীদের সম্মতিতে পরবর্তীতে দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত করার জন্যই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। দলীয় গঠনতন্ত্রে ওই পদ না থাকলেও আগামী সম্মেলনে বিষয়টির সুরাহা করে ফেলা হবে।
গত কয়েক বছরে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেওয়া সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ রোববার নিজের জেলা রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ভাই জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ও উত্তরসূরি ঘোষণা করেন।
এর মধ্য দিয়ে ১৯৮৬ সালে যাত্রা শুরু করা এই দলটিতে নতুন করে ভাঙনের গুঞ্জন শুরু হয়। পাঁচ দিনের সফর সংক্ষেপ করে ঢাকায় চলে আসেন এরশাদ, হাজির হন সংবাদ সম্মেলনে।
বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দলের কাউন্সিল আয়োজনে বাবলু ব্যর্থ হয়েছেন।
“বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দলের স্বার্থে।”
এরপর দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিবের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন এরশাদ।
“রুহুল আমিন হাওলাদার আমার মহাসচিব ছিলেন ১৪ বছর।… আজ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন রুহুল আমিন হাওলাদার।
বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিপক্ষে ছিলেন এরশাদ। হাওলাদারও সেই পক্ষ নেন।
অন্যদিকে রওশনের নেতৃত্বে পার্টির আরেকটি অংশ নির্বাচনে থাকার পক্ষে অবস্থান নেয়। বাবলু ছিলেন সেই পক্ষে।
বর্জন করেও আইনের মারপ্যাঁচে সেই ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন এরশাদ; পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ। আর বিএনপির বর্জনে রওশন হয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা।
ভোট নিয়ে সেই মতদ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় হাওলাদারকে। নতুন মহাসচিব হন রওশনঘনিষ্ঠ বাবলু।
জাতীয় পার্টির নেতাদের সরকারে থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই এরশাদ বলেছিলেন, রওশনই তার কাণ্ডারি।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, “দুজন নেতা আমার এবং আমার স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, থাকতে পারে না।”
আগের রাতে সভাপতিমণ্ডলির কথিত যে বৈঠক থেকে রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে- সেই সভা রওশন ডাকেননি বলেও দাবি করেন এরশাদ।
“আমার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রেসিডেন্ট মেম্বার। প্রেসিডিয়িাম মিটিং ডাকার এখতিয়ার একমাত্র আমার । আমি এখনও চেয়ারম্যান আছি। সিদ্ধান্ত কেবল আমিই দিতে পারি।”
এরশাদ বলেন, পার্টির দিকটি তিনিই দেখেন; রওশন দেখেন ‘পার্লামেন্টারি বডি’।
“আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নাই, দ্বন্দ্ব ছিলও না। গতকাল যা হয়েছে তা প্রেসিডিয়াম মিটিং ছিল না। রওশন কোনো মিটিং ডাকে নাই।”
তিনি প্রশ্ন করেন- রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার যে ঘোষণা এসেছে, ‘তা দেওয়ার বাবলু কে?’
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ থাকা অবস্থায় ক্ষমতা নিয়ে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে দেশ শাসন করেন এরশাদ। পরে বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করেন। শুরু থেকেই তিনি দলের চেয়ারম্যান।