“কত ‘ব্যর্থতা’ এই সরকারের যে আমার একটা দ্বীপ, সেই দ্বীপে আমরা যেতে পারছি না”, বলেন তিনি।
Published : 15 Jun 2024, 08:27 PM
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে মিয়ানমারের যুদ্ধ জাহাজে উপস্থিতির ঘটনায় সরকার কেন ‘নিশ্চুপ’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, “এই যে নতজানু, মিয়ানমারের মত দেশকেও কিছু বলা যাবে না, এটা কতটা ‘দাসসুলভ’ মনোভাব হতে পারে!”
তিনি বলেন, “পত্রিকায় খবরে এসেছে. সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সংকট, সেখানে আতঙ্ক। কি দুঃখজনক! মানে এটাকে কী বলব? কত ‘ব্যর্থতা’ এই সরকারের যে আমার একটা দ্বীপ, সেই দ্বীপে আমরা যেতে পারছি না।
“সেই দ্বীপে গেলেই অন্য দেশ থেকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত সরকার কোনো রকমের কোনো বক্তব্য পর্যন্ত দেয়নি। হোম মিনিস্টার সাহেব বললেন, ‘এখনো এমন কোনো অবস্থা হয়নি যে, এটাতে আমরা স্টেটম্যান্ট দেব বা কিছু বলব’।”
বিএনপি নেতা বলেন, “সীমান্তে লোক মারছে একটা কথা বলে না, পানি দেয় না একটা কথা বলে না। আর সেন্ট মার্টিনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, সেখানে কয়েক লক্ষ মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ এ নিয়ে সরকারের কোনো ‘মাথাব্যথা নেই’।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গত এক মাস টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকা মোটামুটি শান্তই ছিল। কিন্তু ৫, ৮ এবং ১১ জুন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্ট মার্টিনগামী নৌযানে গুলি করা হয়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফ ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এর মধ্যে বুধবার টেকনাফের নাফ নদীতে ওপারে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধ জাহাজ দেখা গেছে। এরপর রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার হতে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে। ফলে দ্বীপে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দেয়।
পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে বিকল্প পথে যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে জাহাজ পাঠানো হয়েছে সেন্ট মার্টিনে।
শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা আক্রান্ত হলে সেই আক্রমণের জবাব দেব। আমরা আমাদেরকে এত খাটো করে দেখি কেন? আমরাও প্রস্তুত আছি। আমরা আক্রমণ করব না। কিন্তু আক্রমণ হলে কি আমরা ছেড়ে দেব?”
এর মধ্যে মিয়ানমারের জাহাজটি সরে গেছে বলে তথ্য মিলেছে।
বিএনপি নেতা বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি সমর্থিত সাংবাদিকদের সংগঠন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে এক আলোচনায়।
১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাকশাল কায়েমের অংশ হিসেবে চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য সাংবাদিকদের একটি অংশ দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
এই আলোচনায় বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের ঐক্যের আহ্বান ফখরুল। তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা এক প্লাটফর্মে আসুন। গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করেন, তারা যদি একই জায়গায় আসেন তাহলে কিন্তু আমার মনে হয় আপনারা অনেক বেশি শক্তিশালী হবেন।
“এখানে আমরা বিভক্তি দেখতে পাই। যারা সিনিয়র আছেন তারা চেষ্টা করেন, তরুণরা যারা আছেন তারা এবার অন্তত চেষ্টা করেন যেন আমরা এক হই।”
‘দুই-চারটা বোম টোম ফুটিয়ে’ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। বলেন, “মানুষকে নামিয়ে আনতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে, সব জায়গায় যেতে হবে। তরুণ-যুবকদের সক্রিয় করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর বাণী ক্ষমতাসীনরা শুনছে কি?
টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে বাণী প্রচার হয়, তা ক্ষমতাসীনরা শুনছে কি না, সে প্রশ্নও রাখেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “একটা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের আগে শেখ মুজিবু্র রহমানের কিছু বাণী প্রচার করা হয়। উনি বলছেন, ‘যারা সম্পদ লুণ্ঠন করে, সম্পদ পাচার করে নিয়ে যায়, তাদের এ দেশের মাটিতে কোনো জায়গা নেই।’
“আমি বলি, আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা কি এটা একবারও শুনছে, দেখছে? কারা সম্পদ লুণ্ঠন করছে, কারা সম্পদ পাচার করছে, এটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ জানে। আপনারা (সাংবাদিকরা) হয়ত সব কিছু লিখতে পারেন না। আমরা কিছু কথাটা বলার চেষ্টা করি। যেমন কয়েকদিন আগে বলেছি নগদ (মোবাইল আর্থিক সেবা দানকারী কোম্পানি) টাকা পাচার করছে কীভাবে? প্রতিটি টাকায় তাদের পাঁচ পয়সা করে কমিশন আছে। এই কমিশনের টাকা কোথায় যায়? আমি এই সম্পর্কে কোনো উত্তর পাইনি।”
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ‘নজিরবিহীন’ কাজ করেছেন মন্তব্য করে ফখরুল কথা বলেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়েও।
তিনি বলেন, “একটি পত্রিকায় দেখলাম সাবেক সেনা প্রধান আজিজের ঘটনাগুলোর কিছু কিছু বের হয়ে আসছে। ভাইদেরকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার জন্য সে পুরোপুরি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।
“সেনাবাহিনীর একজন সাবেক প্রধান তিনি এ রকম জালিয়াতি করবেন, আমরা চিন্তা করতে পারি না। পুলিশ প্রধান এ রকম ভয়াবহভাবে ‘ডাকাতি’ করে গোটা দেশে একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলবেন! তার দুর্নীতি চিন্তা করা যায় না। কিন্তু এরা সেটাকে সম্ভব করেছে।”
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, কায়কোবাদ মিলনও বক্তব্য রাখেন।