জন্মদিনের মাহফিলে খালেদার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি বিএনপির

আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 01:20 PM
Updated : 16 August 2022, 01:20 PM

জন্মদিনের দোয়া মাহফিলে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছে বিএনপি।

খালেদার ৭৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলে এই দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তাধীনে মুক্তি নিয়ে নিজের বাড়িতে রয়েছেন।

ফখরুল বলেন, “আমাদের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গণতন্ত্রের মা যিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন, যিনি গণতন্ত্র চর্চা করেছেন তাকে অবশ্যই নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এই জন্মদিনে আমরা তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি, আমরা দোয়া করছি আল্লাহ‘তালার কাছে তিনি সুস্থ হয়ে, সুস্থ শরীরে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসেন, আমাদেরকে নেতৃত্ব দেন।”

খালেদা জিয়াকে ‘দেশের রাজনীতির ইতিহাস’ হিসেবে বর্ণনা করে ফখরুল বলেন, “খালেদা জিয়া একজন সাধারণ নেত্রী নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটা ইন্সটিটিউশন। তিনি তার সারাটা জীবন এই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন…মানুষকে মুক্ত করবার জন্য তিনি লড়াই করে চলছে নিরবধি।”

ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এই দোয়া মাহফিল হয়।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “বর্তমান সরকার যারা অবৈধ এবং জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, যাদেরকে তুলনা করা যায় একমাত্র পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে।…আজকের অবৈধ অনির্বাচিত ফ্যাসিবাদী সরকার তারা বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ধুলিসাত করেছে, ধবংস করে দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে।“

বিএনপির ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা, ৬০০ এর বেশি নেতা-কর্মীকে গুম, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

ভোলার প্রতিবাদ সমাবেশে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “এই তো সেদিন ভোলাতে কীভাবে আমাদের ছাত্রদলের নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়ে্ছে। প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, প্রতিদিন মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব কথা আর গোপন নেই।”

বাংলাদেশে ‘গুমের’ ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি নেত্রনিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নেত্রনিউজের এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গতকালই স্টেটমেন্ট দিয়েছে। এই যে ভয়াবহ, ভয়ঙ্কর মানবাধিকারের যে চিত্র, এই চিত্র অবশ্যই শুধু নিন্দা নয়, এটা জঘন্যতম একটা ঘটনা।”

এর তদন্ত করতে জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা (অ্যামনেস্টি) বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের যে হাই কমিশনার, তাকে বলেছেন যে আপনি এটার নিন্দা করেন এবং এর সম্পর্কে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত অনুষ্ঠান করেন।”

আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা জানি এই সরকার সহজে যাবে না। তাদের পায়ে তলে মাটি নেই, মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। সেজন্য আমরা জনগণকে সংগঠিত করে.. জনগণের সরকার নিয়ে আসতে চাই।”

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলের আগে আলোচনায় ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।

মিলাদ মাহফিলে বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল বারী ড্যানি, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল খালেক, সাইফুল আলম নিরব, মহানগরের ইশরাক হোসেন, মোহাম্মদ মোহন, ইউনুস মৃধা, আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ, এজিএম শামসুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ‍ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ মহানগরের কয়েক‘শ নেতা-কর্মী অংশ নেন।