সামনে ‘রাজনৈতিক ঝড়’ও আসছে: ফখরুল

মির্জা ফখরুল বলেছেন, “যদি সেইভ এক্সিট চান তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটা ‍সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 03:01 PM
Updated : 13 May 2023, 03:01 PM

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে সামনে ‘রাজনৈতিক ঝড়’ আসবে বলে সরকারকে সর্তক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সাগরে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অবস্থানের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শনিবার ঢাকার নয়া পল্টনে এক সমাবেশ তিনি এই সর্তকবার্তা দেন।

ফখরুল বলেন, “ঝড় আসছে, উত্তাল সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসছে এই বাংলাদেশের বুকে…। আজকে ঝড় শুধু প্রাকৃতিক ঝড় আসছে সেটা মনে করার কারণ নেই।

“রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে। এই রাজনৈতিক ঝড় এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে নিঃসরিত হয়ে সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।”

তিনি বলেন,আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা সরকারে আছেন, যারা সরকার চালাচ্ছেন… এখনও সময় আছে আপনারা মানুষের ভাষা বুঝতে শিখুন, আপনারা মানুষের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন, চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন।

আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। একথা আমরা বারবার বলেছি, আবারও বলছি- পদত্যাগ চাই। যদি সেইভ এক্সিট চান তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটা ‍সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”

এ সময় বিএনপির এই আন্দোলনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও একাত্মতা প্রকাশ করেছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এটা দেশে-বিদেশে আজকে প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না, হতে দেবো না। সাফ কথা।”

এদিন নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে ‘গায়েবী মামলায়’ গ্রেপ্তার নেতাকর্মী ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এই সমাবেশ হয়।

‘আন্দোলন ডাইভার্ট করতে বানোয়াট মামলা’

পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় প্রায় পাঁচ দশক বাদে শেরে বাংলা থানায় যে মামলা হয়েছে- সমাবেশে তা নিয়েও কথা বলেছেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, যখন জনগণের এই দাবি আজকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়… আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই- তখন তারা সেটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এই নতুন মামলা দিয়েছে “

২০১৮ ও ২০১৪ সালেও একই কায়দা অবলম্বন করা হয়েছিল দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আসামি করে আওয়ামী লীগ আরেকটা নতুন মামলা দিয়েছে ৪৭ বছর পরে। কেন? আপনারা যে আন্দোলন করছেন, জনগণ যে আন্দোলন করছে এই আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য, বিভক্ত করার জন্য এই সমস্ত আবার নতুন ফন্দি-ফিকির শুরু করেছে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতায় বসলেও চলছিল অস্থিরতা। এর মধ্যেই ৩ নভেম্বর সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়, গৃহবন্দি করা হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে।

৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান হয় জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে। তখন মুক্ত হন জিয়া; নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম এবং সাব সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম।

কঠিন সেই সময়ে বৈরী পরিবেশে বেড়ে ওঠা নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজাহার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ৪৮ বছর পর একটি মামলা করেছেন।

বুধবার ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানার দায়ের করা মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর বিক্রমের নির্দেশে তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

এ বিষয় ফখরুলের বক্তব্য, “এসব মামলা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এই সমস্ত ধানাই-পানাই করে এদিক-ওদিক গিয়ে… একটা কথা আছে, ফুটবল খেলায় ক্যারি কাটা বল নিয়ে এদিক-ওদিক করে গোল দেওয়া… ওই বল দিয়ে ক্যারি কাটা করে কোনো লাভ হবে না, গোল দেওয়া যাবে না। গোল দেবে এবার জনগণ।”

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল মালেক রতন, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, রকিবুল ইসলাম বুকুল বক্তব্য দেন।

এছাড়া মহানগর যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহানগর দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তরের আবদুর রাজ্জাক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণও সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, রফিকুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, তাবিথ আউয়ালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।