আওয়ামী লীগের উন্নয়ন মডেল ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে: ফখরুল

“এদেশ আর নেই, এদেশের কিছু আর অবশিষ্ট নেই,” মন্তব্য তার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2023, 04:28 PM
Updated : 18 March 2023, 04:28 PM

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, দেশের চলমান সব সঙ্কটের পেছনে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি; যে কারণে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে আর এজন্য সরকারই দায়ী।

শনিবার বিকালে সরকার হটাতে ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, “ভারতে একটা স্লোগান ছিল - অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হ্যায়, নাম বললাম না। আজকে আমাদের স্লোগান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ভোট চোরের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি। একমত আছেন আপনারা।“

সরকারের সমালোচনা করে তার অভিযোগ, “আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশকে একটা ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, গোটা দেশ ফোকলা হয়ে গেছে। এরা ভোট চোর, বাংলাদেশের অর্থনীতির চোর… এদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

টিআইবিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে মির্জা ফখরুলের দাবি, “আজকে যত সমস্যা দেখতে পান, এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-লবণ-রসুনের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং খাত, অবকঠামো খাত… সব কিছুর মূলে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি।

“এগুলো আমাদের কথা নয়, কথাগুলো কিছুদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বের একটি বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ইকনোমিকস্ট- এর। সেই পত্রিকা বলেছে যে, বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও পশ্চিমা রাজনীতি-অর্থনীতিবিদরা খুব জোরেশোরে বলতেন যে, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে একটা মডেল - মডেল অব ডেভেলপমেন্ট। সেই পত্রিকা এখন বলছে যে, এই মডেল অব ডেভেলপমেন্টের যে ফানুস, যে বেলুন উড়ছিল আকাশে তা দুর্নীতির কারণে চুপসে পড়ে গেছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এদেশ আর নেই, এদেশের কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এই রাষ্ট্রকে ওরা ধ্বংস করে ফেলেছে। গত দুইদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। তারা রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করে ফেলেছে। এদেশে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে।“

এমন প্রেক্ষাপটে সরকারকে হটাতে সবাইকে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান তিনি। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকরারের অধীনে নির্বাচনের পুরনো দাবিও আবার তোলেন তিনি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সরকার যারা বিনা নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে- তাদেরকে জনগণের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। আজকে তাই সমস্ত দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে।“

হজ প্যাকেজ এত বেশি!’

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেখুন আপনারা হজের ব্যাপারে দুষ্টামি করা ওদের পুরনো অভ্যাস। আজকে সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদেরকে সাত লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা আর পাকিস্তানে চার লাখ টাকা। তাহলে বাংলাদেশে কেন সাত লাখ টাকা হবে?

“ওই যে চুরি করেছে। বাংলাদেশ বিমান থেকে চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে,” অভিযোগ তার।

শনিবার বিকালে সরকারের ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতির’ প্রতিবাদে এবং সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে সমমনা জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত নয়া পল্টন সড়কজুড়ে হাজারো নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় বিএনপি ছাড়াও পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট, আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং পূর্ব পান্থপথে তেজগাঁওয়ে দলের কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আলাদা সমাবেশ করে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানায়, ঢাকা ছাড়াও সব মহানগরে বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাসির উদ্দিন অসীম, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রওনাকুল ইসলাম টিপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাঈদ সোহরাব।

আরও বক্তব্য দেন- মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, শফিকুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের হেলাল খান, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী ও অধ্যাপক লুতফর রহমান।

সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।