৭ নভেম্বর কর্মসূচি নেই বিএনপির, ‘অগ্নি সন্ত্রাস’ সরকারের: রিজভী

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের স্মরণে প্রতি বছর নানা আয়োজন থাকে বিএনপির। রিজভী বললেন, ‘‘সরকারের ‘নিষ্ঠুর নির্দয় নিপীড়নের’ প্রতিবাদে আগামীকাল আমাদের কর্মসূচি স্থগিত থাকছে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2023, 02:44 PM
Updated : 6 Nov 2023, 02:44 PM

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসার দিন ৭ নভেম্বর এবার কোনো কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি।

এই দিনটিকে বিএনপি পালন করে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। তবে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

সোমবার বিকালে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান।

বিএনপি হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিতে ফিরে যাওয়ার পর এদিন সকালে খিলগাঁওয়ের তালতলা পল্লীমা সংসদের কাছে জনা ত্রিশেক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিলে নামেন তিনি। তবে সংবাদ সম্মেলনে করেন আগের দিনের মতোই ভার্চুয়ালি।

রিজভী বলেন, ‘‘সরকারের ‘নিষ্ঠুর নির্দয় নিপীড়নের’ প্রতিবাদে আগামীকাল আমাদের কর্মসূচি স্থগিত থাকছে। আমাদের ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা’ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে যাওয়ার যে কর্মসূচি, সেই কর্মসূচি স্থগিত থাকছে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্বপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনা প্রধানের দায়িত্ব আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনা বাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।

৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন তিনি।

দিনটিকে আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে।

প্রতি বছর এই দিবসের দিন বিএনপির নেতাকর্মীরা সকালে শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করে থাকে। আলোচনা সভাসহ থাকে আরও নানা আয়োজন।

রিজভী বলেন, ‘‘কিন্তু এই ‘দুর্বিনীত দুঃশাসক’ যারা ৭৫ সালে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল এবং এখন যারা পুনরায় ‘নব্য বাকশাল’ কায়েম করেছে, তারা আবার নতুন কায়দায় বিরোধী দলের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়েছে। মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করেছে।

‘‘অনেক নেতা বাসায় থাকতে পারছেন না.. তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। ‘গণতন্ত্রের মা, গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে তাকে সাজা দিয়ে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে।” 

‘অগ্নি সন্ত্রাসের কাহিনী’ সরকারের

‘এক দফার শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনে কালিমা লেপন করতেই সরকার ‘অগ্নি সন্ত্রাসের কাহিনী’ সাজাচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “বাসে আগুন দিয়ে দায় চাপায় ‘গণতন্ত্রের বিপ্লবী’ কর্মীদের নামে, যার ভুরি ভুরি প্রমাণ এখন মানুষের হাতে।

‘‘গত ২৮ অক্টোবর যারা বাসে আগুন দিয়েছে তারা দৌড়ে আওয়ামী লীগের অফিসের ভেতরে ঢুকেছে। নানা ঘটনায় এই ধরনের দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে।”

গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত সরকারের ‘কব্জায়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সে কারণে বিএনপির কোনো নেতার নামে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা অত্যন্ত সহজ।

‘‘দুই-একটি মিডিয়ার কথা আমরা জানি, যাদের মালিক সরকারের মন্ত্রী, কোনো বাসে যখন আগুন লাগছে, সেই মিডিয়ার ক্যামেরা সেখানে থাকে। এখানেই বোঝা যায় এটা একটা বিরাট পরিকল্পনার অংশ।”  

‘কারাগারে কঠিন অবস্থা’

কারাগারগুলোতে ‘মানবিক বিপর্যয়’ চলছে অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, “কেরানীগঞ্জ কারাগারে যাদের আটক রাখা হয়েছে, সেসব নেতা-কর্মীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারছে না।

“কারাগারের প্রতিটি ভবনের ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের ঠেসে ঠেসে রাখা হয়েছে। যে ওয়ার্ডে ১০/১৫ জনের বেশি বন্দিকে রাখা যায় না সেখানে একটি ওয়ার্ডে ৪০/৫০ জন বন্দিকে রাখা হচ্ছে।”

গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের ২৭৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও দাবি করে রিজভী।