খালেদা জিয়ার অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি’

“রোগীর অসুস্থতা সম্পর্কে মিডিয়ায় বলা ঠিক না। খালি এইটুকু জানানো যেতে পারে যে, উনার কিছু শারীরিক অসুস্থতা,… কোনো কোনোটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছিল,” বলেন এজেডএম জাহিদ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2023, 09:36 AM
Updated : 30 April 2023, 09:36 AM

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতলের কেবিনে চিকিৎসকদের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে রোববার তিনি বলেন, “ম্যাডাম কেবিনে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিসাধীন আছেন। আজ উনার অবস্থা গতকালের মতই আছে। বাট কিছুটা… যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তার পর কিছুটা উন্নতি উনার হচ্ছে।”

মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে শনিবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন।

অধ্যাপক সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি মেডিকেল বোর্ড আগে থেকেই বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা কার্য্ক্রমের সঙ্গে যুক্ত। শনিবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বৈঠক করেছেন বলেও জানান অধ্যাপক জাহিদ।

তিনি বলেন, “গতকাল ভর্তি হওয়ার পরে ম্যাডামের বেশ কিছু পরীক্ষা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে করা হয়েছে। ওইসব পরীক্ষার রিপোর্ট আসা শুরু করেছে। মেডিকেল বোর্ড আজকে (রোববার) সন্ধ্যায় কোনো একটা সময়ে বসবেন এবং রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে উনার পরবর্তী পর্যায়ের যে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন, তা দেবেন।

“তবে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল বোর্ড গতকাল একদফা বসে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নিয়েছেন। আজ সকালেও বোর্ডের কয়েকজন সদস্য উনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেছেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, “উনার কিছু অসুস্থতা ছিল… কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। যার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসায় উনি মোটামুটি রেসপন্স করছেন।”

খালেদা জিয়াকে কয়দিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে– এমন প্রশ্নে জাহিদ হোসেন বলেন, “এটা মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে, উনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। কাজেই এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা ও লিভারের রোগে ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতা নিয়ে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। সেবার হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছিল।

খালেদা জিয়া এখন ঠিক কী ধরনের অসুস্থাতায় ভুগছেন জানতে চাইলে এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “রোগীর অসুস্থতা সম্পর্কে মিডিয়ায় বলা ঠিক না। খালি এইটুকু জানানো যেতে পারে যে, উনার কিছু শারীরিক অসুস্থতা, উনার হার্টের জটিলতা, উনার লিভারের জটিলতা, উনার কিডনির জটিলতা– এগুলো ছিলো, আছে… আপনার জানেন। সেগুলোর কোনো কোনোটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছিল, সেজন্য চেকআপ ও চিকিৎসার জন্য উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

“উনি কেবিনেই আছেন। কিন্তু কেবিনে উনার জন্য স্পেশালিস্ট এমআইএসটি নার্স-ডাক্তার সাহেবরা… দেয়ার টেকিং কেয়ার অফ। কেবিনে মানে এমনি শুয়ে থাকা– তা না। শি ইজ আন্ডার স্ট্রিক্ট সুপারভিশন।”

অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে খালেদার মেডিকেল বোর্ডের অন্য চিকিৎসকরা হলেন– অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জিয়াউল হক এবং অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম।

এছাড়া লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান জাহিদ হোসেন।

হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন তার ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানও সবসময় খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড স্থগিত করেন ছয় মাসের জন্য।

ওই বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানে তার বাড়িতে রয়েছেন। প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে পরিবারের আবেদনে।