এবার না পারলে কারও জীবনের নিশ্চয়তা থাকবে না: ফখরুল

‘বিএনপি হিন্দুবিরোধী’- এমন কথা মানুষ আর বিশ্বাস করে না, বলছেন দলটির মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2023, 12:09 PM
Updated : 12 August 2023, 12:09 PM

চলমান আন্দোলনে জয়ী না হলে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের হাতে চলে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সেজন্য দেশের তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আপনাদের ছড়িয়ে পড়তে হবে কমিউনিটিসহ সকল মানুষের মধ্যে...তাদের বোঝাতে হবে যে এই গণতন্ত্র লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।”

ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শনিবার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের প্রতিনিধি সম্মেলনের ‍উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন ফখরুল।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজকে আপনারা দেখছেন, কীভাবে এই সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য কাজ করছে। আমাদের যে ন্যূনতম অধিকার, সেই অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিচ্ছে। দেখুন বড় দুঃখজনক ব্যাপার যেটা, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও গৃহবন্দি হয়ে আছেন।

“গত পরশুদিন হাসপাতালে গেছেন। এই প্রথম দেখলাম যে ডাক্তাররা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন…তারা বলছেন যে, আমাদের চিকিৎসার যে ব্যবস্থা, আমরা কী করতে পারব জানি না। একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে…যেটার কোনো ভিত্তি নাই।”

দেশের জনগণ ‘নিরাপদ নয়’ মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে এদেশে কেউ নিরাপদ বোধ করে না। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কেউ না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে না। কখন কাকে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে কী বিপদে ফেলবে…গুম হয়ে যাচ্ছে, ৬০০ এরও অধিক গুম হয়ে গেছে।

“ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে আপনাদের কমিউনিটির বহু লোককে আসামি করেছে। এই সব করে দাবিয়ে রাখা যাবে না।”

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের প্রতিনিধি সম্মেলনের অনুষ্ঠানে শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেন।

‘বিএনপি হিন্দুবিরোধী- এটা মানুষ বিশ্বাস করে না’

‘বিএনপি হিন্দুবিরোধী’- এমন কথা মানুষ বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, “এরা (আওয়ামী লীগ) একটা মার্কেটিং করে। মার্কেটিংটা হচ্ছে যে, প্রতিবেশী দেশ ভারত সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি, তাদের কাছে একটা অপপ্রচার চালায় যে, ‘বাংলাদেশে বিএনপি হচ্ছে হিন্দুবিরোধী দল’। এটা কি আপনারা বিশ্বাস করেন? আপনারা দেখেছেন কখনও?”

সেসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মীরা ‘না’ সূচক জবাব দেন। এরপর ফখরুল বলেন, “আমরা জোর গলায় বলতে পারি যে, বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা নিরাপদ থাকে। এখানে  আমাদের সকল সম্প্রদায়ের অধিকারকে রক্ষা করবার কমিটমেন্ট আছে।

“আর গণতন্ত্র যদি থাকে সেটা তো থাকবেই। গণতন্ত্র না থাকলে সেটা থাকবে না। একমাত্র সুরক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করবার জন্য আমাদের এক হতে হবে। এই যুদ্ধ তারেক রহমানের যুদ্ধ না, এই যুদ্ধ মির্জা ফখরুলের অথবা বিজন কান্তি সরকারের যুদ্ধ না, এই যুদ্ধ সকল মানুষের। আমার অধিকার চলে যাচ্ছে, আমার ভোটাধিকার পাচ্ছি না।”

১৯৯১ সালে বিএনপির আমলে ভারতের রাম মন্দির, বাবরী মসজিদের ঘটনার সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হামলার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল জড়িত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি, দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের লোকজনই দখল করা এবং বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, রামুতে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ-হামলার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত।

“উদ্দেশ্যে একটাই তাদের সম্পত্তিগুলো দখল করা, তাদেরকে বিতাড়িত করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করা। এটা এখন লোকে বুঝে, এটা আর মানুষ বিশ্বাস করে না, গ্রহণ করে না। অনেকটা রাখাল বালকের মতো হয়ে গেছে।”

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, সাধারণ সম্পাদক এসএন তপন দে, উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, আ্যালবার্ট পি কস্টা, অর্পনা রায় দাস, সুশীল বড়ুয়া, জন গোমেজ প্রমূখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।