জোট শরিকদের প্রতিবাদ নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের

“বাংলাদেশেই আজকে যতো দোষ সব নন্দ ঘোষ সরকারের,” বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 01:53 PM
Updated : 11 August 2022, 01:53 PM

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিরোধিতায় ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা সরব হলেও তা নিয়ে ভাবছে না আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “জোটের শরিকদের দলগতভাবে কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার আছে। তারা করতে চাইলে করবে।”

বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

সম্প্রতি সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ বাড়ানোর পর আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলগুলোও তার বিরোধিতায় নেমেছে।

জোটে থেকে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা নিয়ে কাদের বলেন, “জোট তো আমাদের ‘ইলেকশন অ্যালায়েন্স’, সেটা তো কৌশলগত জোট। সেখানে আদর্শের কোনো বিষয় নেই। তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা কেন জোট করেছি? এসব ব্যাপার তো ভাবতে হবে।”

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল কি না- জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এটা সরকারের ব্যাপার। এটা দলীয় মিটিংয়ে আলোচনা হয়ে করে না। সরকারিভাবে এটা সিদ্ধান্ত হয় এবং এখানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের হেড কিন্তু প্রধানমন্ত্রী।”

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে সরকার বাধ্য হয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কোনো বা বিকল্প কোনো পথ ছিল না। এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে তখনই আমরা তেলের দাম কমাব।”

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবও দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “বিএনপি বড় বড় কথা বলে। তাদের সময় সময় বিদ্যুৎ ছিল না, ছিল খাম্বা। সকাল নেই-বিকাল নেই ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোড শেডিং। এটা কি মিথ্যা? আজকে কোন মুখে তারা বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলে।

“বিদ্যুৎ আমরা শতভাগ দিয়েছি। আজকে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে। যখন স্বাভাবিক সময় আসবে তখন আমরা আমাদের ‘প্রমিজ’ থেকে পিছিয়ে যাব না।”

“বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটা যুদ্ধের কারণে এবং এটা বৈশ্বিক সংকট। বিভিন্ন দেশেই এই সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনো দেশে এজন্য সরকার দায়ী করা হচ্ছে না। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের বিষয় আলাদা। সেখানে একটা পটপরিবর্তন হয়েছে,” বলেন তিনি।

ইউরোপের উদাহরণ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ফ্রান্সে এত খারাপ অবস্থা সেখানে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ম্যাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিরোধী দল পাচ্ছে। বামপন্থি-ডানপন্থিরা একত্রিত হয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু তারা কোনো আন্দোলন করেছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশে শুধু ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। বাংলাদেশেই আজকে যতো দোষ সব নন্দ ঘোষ সরকারের।”

সরকার উৎখাতের চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “পরিষ্কারভাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমলে আমরাও এখানে সমন্বয় করবো’। এটা বলার পরও আজকে বিএনপিসহ তাদের দোসররা আজকে মাঠে নেমেছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে, বিষোদগার করছে। জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ে নানান কথা বলছে।”

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সরকারবিরোধীদের গ্রেপ্তার করা বা বক্তব্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়নি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকেও তারা সমাবেশে সবাই ভাষণ দিয়েছে, কিন্তু সরকার কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আপনি যদি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর চড়াও হন, তখন তারা কি করবে?”

জরুরি সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।