এমন কর্মসূচি দেব, সরকারের কথা বলার জায়গা থাকবে না: মান্না

“সরকার যাতে যায়, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যই তো এই পদযাত্রা, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যেই রোডমার্চ, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যেই আরো বৃহত্তর কঠোর কর্মসূচি আমরা দেব এবং আমরা সবাই মিলে দেব।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 09:49 AM
Updated : 23 May 2023, 09:49 AM

ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্বাচনের ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ তৈরিতে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মঙ্গলবার এক পদযাত্রা কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলছি, তোমার (সরকার) অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, তোমাকে যেতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভাঙতে হবে তারপরে একটা অন্তর্বতীকালীন সরকার হবে, সেই সরকার দেশে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যাতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।”

মান্না বলেন, “আমাদেরকে কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, এ (সরকার) তো যেতে চায় না।… ও (সরকার) যাতে যায়, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যই তো এই পদযাত্রা, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যেই রোডমার্চ, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যেই আরো বৃহত্তর কঠোর কর্মসূচি আমরা দেব এবং আমরা সবাই মিলে দেব।”

সরকার পতনের আন্দোলনে বিরোধীদলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই যুগপৎ কর্মসূচির আওতায় আমরা এই রকম কর্মসূচি দেব, যখন সরকারের আর কথা বলার জায়গা থাকবে না। আমরা সেই আন্দোলন গড়ে তোলবার চেষ্টা করছি।”

সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বতীকালীন সরকারের দাবিসহ ১৪ দাবিতে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামন থেকে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। পল্টন মোড় হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক গিয়ে এই শেষ হয় কর্মসূচি।

পদযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ তুলে মান্না বলেন, “যেই স্যাংশন আসে নাই, যেই স্যাংশনের কথা আমেরিকা বলে নাই, তার কথা সরকার প্রচার করছেন কেন? কারণ একটাই। দেশে তাদের পায়ের নিচে মাটি নাই, মানুষ পক্ষে নাই। আন্তর্জাতিক যারা ছিল তারা সবাই একেক করে বলেছে- হয় ভালো নির্বাচন দাও, নাহলে আমরা আমাদের কাজ করব।

“সেই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও তার সরকার মনে করেছে, যেতে যখন হবেই তখন একটা বাহানা তৈরি করি। গণআন্দোলনে আমরা যাচ্ছি না, আমরা যাচ্ছি ওই আমেরিকার কারণে, বিদেশি শক্তির কারণে। সেজন্য তাদের নামে বিভিন্ন কথাবার্তা বলবার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র মঞ্চ বলে আমরা আওয়ামী লীগকে সরিয়ে আরেকটা পার্টিকে বসালাম, ওই কাজ করতে আসিনি। আমরা আওয়ামী লীগ বদলাব, এই দুর্নীতিবাজ, এই দুর্নীতি, এই অন্যায়-অত্যাচার, এই রাষ্ট্র যেটা জনগণের ওপর অত্যাচার করে সেটাও বদলাব।

“আমরা জনগণের জন্য উপযোগী কল্যাণকর, জনগণের জন্য সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করে…সেইরকম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। তার লড়াই আমাদের অব্যাহত থাকবে। সেই লড়াইয়ের স্বপক্ষে আমরা অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন ঐক্যবদ্ধ করেছি, ঠিক সেই রকমভাবে আপনাদের মাধ্যমে সমস্ত জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করছি। ইনশাল্লাহ আমরা জয়লাভ করব।”

‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে’

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পদযাত্রা কর্মসূচির সমাবেশে বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৭ কোটি মানুষ কেউ আর এই সরকারকে দেখতে চায় না। আমরা স্পষ্ট করে সেজন্য বলেছি, সোজা পথে হাঁটেন, সেরাতুল মোস্তাকিম ধরেন। কীভাবে পদত্যাগ করবেন ঠিক করেন…।

“আমরা বলতে চাই, সোজা পথে না হাঁটেন, রাজপথে আপনাদের কান ধরে বিদায় করা ছাড়া, গলায় গামছা লাগানো ছাড়া বাংলাদেশের মানুষকে কোনোভাবে আমরা রক্ষা করতে পারব না। গণতন্ত্র মঞ্চ সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল বিরোধী দলকে রাজপথে সমন্বিতভাবে বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সেই লড়াইকে আমরা এগিয়ে নেব, এবার মানুষ বিজয় হবে, বাংলাদেশ জিতবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এখন থেকে নাকি তারা প্রতিরোধ করবেন। আমাদের লড়াইটা জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই। এই লড়াইকে নাকি তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, এটাই তার প্রমাণ।

“এটা হচ্ছে পতনের আগ মুহূর্তের লম্ফঝম্প। এই লম্ফঝম্প দিয়ে টেকা যাবে না। ক্ষমতাকে অবশ্যই ছাড়তে হবে।”

আগামী ২৮ মে ঢাকার মালিবাগ রেলগেইট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত একই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এরপর আগামী ৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত দিনাজপুর অভিমুখে রোড মার্চ করবে তারা।

নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামালউদ্দিন পাটোয়ারি, স্থায়ী কমিটির সদস্য সিরাজ মিয়া সমাবেশে বক্তব্য দেন।