আইএমএফের ঋণ পেতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: ফখরুল

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2022, 10:56 AM
Updated : 6 August 2022, 10:56 AM

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সঙ্কটে পড়ে এখন আইএমএফের ঋণ পেতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে জনগণকে বিপদে ফেলেছে।

ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর পর শনিবার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

বিদ্যুতের লোড শেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যস্থাপনার প্রতিবাদে ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলমের মৃত্যুর প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।

জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে ডলার বাঁচাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছে সরকার। এরমধ্যে আইএমএফের কাছে সরকারের ঋণ চাওয়ার পরপরই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল বলেন, “সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। কারণ তারা এত মিথ্যাচার করে এসেছে যে, রিজার্ভে এত এত ডলার জমা আছে, চিন্তার কারণ নেই। আজকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির কাছে ঋণ চেয়েছে।

“আইএমএফের ঋণের শর্ত খুব শক্ত। তারা বলেছে যে, কোথাও কোনো অধিক ব্যয় করা যাবে না … তারা বলেছে, আজকে যেসব খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, সেই ভর্তুকিগুলো প্রত্যাহার করা হোক।”

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা যখন সঙ্কটে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়াকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির একটা ভয়ঙ্ককর প্রভাব ফেলবে সমগ্র দেশের অর্থনীতির উপরে। এটা বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

“এই জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাবে পরিবহন ভাড়া। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল-ডাল-আটা-তেলের দাম আবার দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মাঝ খান থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কে? ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের সাধারণ মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়।”

আওয়ামী লীগের শাসনে দেশ সঙ্কটে রয়েছে দাবি করে তাদের ক্ষমা থেকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আর সময় নেই। আমাদের সকলকে জেগে উঠতে হবে, জেগে উঠে এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন আমরা আজকে সেই লক্ষ্যে আরো দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি।”

‘বিএনপি নয়, সরকারই চক্রান্ত করছে’

সরকারকে হটাতে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে বলে যে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতারা করছেন, তা অস্বীকার করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “চক্রান্ত তো করেন আপনারা। আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদেরকে নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব।

“কারণ আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদেরকে সংগঠিত করে, জনগণকে সংগঠিত করে, সকল রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হব।”

ছাত্রদলের এই সমাবেশে সংগঠনের ঢাকা মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। ভোলায় নিহত নূরে আলম ও আব্দুর রহীমের স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ করা এই নেতা-কর্মীদের মুখে স্লোগান ছিল- ‘নুরে আলমের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই মরলো কেনো শেখ হাসিনা জবাব চাই’। কেউ কেউ গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়েও আসেন।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “নুরে আলম ও আবদুর রহীম জীবন দিল কেনে? জনগণের দাবি আদায় করতে গিয়ে।

“এই সরকারের আন্দোলনের সফল করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমার শেষ কথা, হটাও হাসিনা, বাঁচাও দেশ। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।”

ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পরিচালনায় ছাত্র সমাবেশে বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম আলীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার হোসেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংগ্রাম পরিষদের ইসমাইল সম্রাট বক্তব্য রাখেন।

দীর্ঘদিন পর নয়া পল্টনে ছাত্রদলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পর সমাবেশস্থল ঘিরে ছিল পুলিশ। তবে কোনো গোলযোগ ঘটেনি।