ইতিবাচক শক্তি আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাক

বহুমুখী শব্দ হয়ে রাজনীতির রঙ বাংলাদেশে জমছে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দল নেই। অথচ, আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাশা করে। যারা আমাদের চেয়েও উন্নত ভাবনায় সিক্ত হয়ে জনমানুষের জন্য লড়বে।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনএ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
Published : 1 Sept 2022, 07:56 AM
Updated : 1 Sept 2022, 07:56 AM

টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ও কার্যকর ব্যক্তির নাম যে শেখ হাসিনা, তা প্রমাণিত সত্য।

উইনস্টন চার্চিলের মতো খুব বেশি দূরদৃষ্টি রেখে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ধারাভাষ্য দিতে অবশ্য যাব না। যখন চার্চিল বলতেন, “তিনিই একজন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা, যিনি আগামীকাল, পরের সপ্তাহ, চলতি মাস কিংবা পরের বছরে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন।” শুধু বলতে পারি যে, দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের সামনে দুই ধরনের রাজনৈতিক অপশক্তি দাঁড়িয়ে যেতে শুরু করেছে।

এক. নৈরাজ্যবাদকে সঙ্গী করে একটি বলয়। নৈরাজ্যবাদ হলো, যা রাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় মনে করে এবং রাষ্ট্রহীন সমাজের সপক্ষে মতপ্রকাশ করে। এই বলয়টি পুনরায় চাইছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টে যা খুশি করার করতে হবে। তারা একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার চায়। অর্থাৎ অনির্বাচিত শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থা কায়েমে এমন পরিস্থিতি তারা প্রত্যাশা করেন, যেখানে তারা বলতে থাকে, যা খুশি হয়ে যাক, আমরা বঙ্গবন্ধুকে মানি না, আওয়ামী লীগের উন্নয়নকে মানি না, আমরা শেখ হাসিনাকে মানি না।

দুই. বিদেশি শক্তির কৃপায় একটি দুর্বল সরকার গঠনের মাধ্যমে পরের স্বার্থ সংরক্ষণ করার বলয়।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ শুধু সরকারি দল হয়ে সফল নয়, আমাদের রাজনৈতিক লেখাপড়া এবং জনস্বার্থের রাজনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে পারফিউম পার্টিকে। পারফিউম পার্টি হিসাবে জাতীয়তবাদী দল-বিএনপিকে বুঝিয়েছি। সন্ধ্যা করে ভাল বস্ত্র পরিধাণ করা, অতঃপর পারফিউম লাগিয়ে অভিজাত পাড়া গুলশানের রাস্তায় গিয়ে তাদের ম্যাডামের সামনে হাজিরা দেয়ার রাজনীতি দিয়ে কি আর বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়?

পিছিয়ে পড়ে বিএনপি এখন বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে রাজনীতি করছে। বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করেও কাজের কাজ যখন হচ্ছে না, তারা তখন একটা কৃত্রিম বিপ্লব প্রত্যাশী হয়ে উঠেছে। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩ সালের ৫ মে– তেমন দিনক্ষণ ঠিক করে কথিত বিপ্লব আর তাদের করা হয়ে ওঠেনি। এদেরকে মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধই সশস্ত্র বিপ্লব। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট, ৩ নভেম্বর ছিল প্রতিবিপ্লবের দুইটি দিবস। আর একজন শেখ হাসিনার টানা তিন মেয়াদের সরকারের প্রতিটি দিনই বিপ্লবের। কারণ, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বের হলে, সড়কগুলোর রঙিন রুপ সেই সাক্ষ্য দেয়। নিম্নবিত্তের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তা প্রমাণ করে। খারাপ আছে হালে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আওয়ামী লীগ কাজ করছে। শেখ হাসিনা এখানেও অচিরেই সফল হবেন।

বাংলাদেশের একটি ছোট্ট সুশীল গ্রুপ দুটি কথিত বলয়ের মধ্যেই নাম ঢুকিয়ে রেখেছে। প্রথমত তাদের লক্ষ্য হলো, সরল মানুষদের ব্যবহার করে তথা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে, আবার দুষ্টু জনশ্রেণিকে উৎসাহ দিয়ে নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আমরা ফলত সতর্ক আছি। জনবিচ্ছিন্ন মানুষগুলোর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসকে সুশীল উপদ্রব হিসাবে দেখেই ওষুধ দিতে হবে।

এই সুশীল শ্রেণির সাথে কতিপয় রাজনীতিকদেরও দেখা যায়। তারা এই করবে সেই করবে, বলতে থাকে। এদের প্রতি মার্গারেট থ্যাচারের একটি বিখ্যাত বক্তব্য ছুঁড়ে দেওয়া যায়। থ্যাচার বলেছিলেন, “রাজনীতিতে যদি কিছু বলতে চাও, তবে পুরুষকে বল– আর যদি কিছু করতে চাও তাহলে একজন মহিলাকে বল।” অর্থাৎ মাহমুদুর রহমান মান্নাদের মতো সুবিধাবাদীদের বলছি, আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। তিনি রাজনীতি বোঝেন, বাংলাদেশ বোঝেন এবং জনশ্রেণির জন্য তার বাবার মতো করে তারও মন কাঁদতে থাকে।

বহুমুখী শব্দ হয়ে রাজনীতির রঙ বাংলাদেশে জমছে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দল নেই। অথচ, আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাশা করে। যারা আমাদের চেয়েও উন্নত ভাবনায় সিক্ত হয়ে জনমানুষের জন্য লড়বে। কিন্তু সত্যি বলতে তা দেখা যাচ্ছে না। মূলধারার রাজনৈতিক বলয় হয়ে কোনো ইতিবাচক শক্তি সংসদীয় গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় থেকে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না। বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে আমাদেরকে ঘায়েল করতে পারছে না। তারা পেছনের রাস্তা কিংবা বাঁকা রাস্তায় হেঁটে ক্ষমতার মসনদে বসতে চায়। ওই কারণেই শেখ হাসিনাও বলছেন, ওরা আবারও আঘাত হানবে! রাজনীতির সোজা পথে বিপক্ষ মতের সাথীদের পেলে মন্দ হয় না। বরং আরও ভাল করার তাগিদ উঁকি দেয়। যাদেরকে দেখা যায়, এরা রাজনৈতিক শক্তি নয়, অপশক্তি।