‘মেন্টাল ফ্লস’ দরকার অনাচার দূর করতে

এম এম খালেকুজ্জামানএম এম খালেকুজ্জামান
Published : 13 July 2022, 12:35 PM
Updated : 13 July 2022, 12:35 PM

বিয়ে বাড়ির ভরপেট কাচ্চি পূর্তির পর ওই আসরের সবচেয়ে সুন্দরী যদি আপনার গল্পসঙ্গী হয়, তাহলে আপনিও বরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে পারেন নিজেকে। কিন্তু কাচ্চির মাংসের বেয়াড়া আঁশ যদি সাদা দাঁতের মাঝখানে নিয়ে সেই সুন্দরী গল্প করেন- আপনার মনোযোগ গল্পে নয়, আটকে থাকবে মাংসের আঁশে। সবাই তো আর টুথ পিক পার্সে নিয়ে ঘোরেন না। এখানে দরকার ডেন্টাল ফ্লসের। অযাচিত অস্বস্তিকর সৌন্দর্য বিনাশী দন্ত মধ্য উপাদান দূর করতে যেমন দরকার ডেন্টাল ফ্লসের, তেমন আমাদের সমাজে লেগে থাকা অস্বাভাবিক সব উপাদান দূর করতে দরকার মেন্টাল ফ্লসের। আমরা জানি এইসব অস্বাভাবিকতা নিয়ে অপরিচ্ছন্নভাবে লেপ্টে থাকা প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা আর সামাজিক অনাচার দূর করতে প্রয়োজন প্রশাসনিক পদক্ষেপের মতো মেন্টাল ফ্লসের ।

জীবনকে সবার থেকে বেশি করে চায় বয়স্করা- সফোক্লেস। আর আমাদের দেশে ঈদ কিংবা যে কোন পার্বণ বেশি করে চায় সুযোগ সন্ধানী সব ব্যাবসাদাররা। কারণ তখন প্রশাসনের লাগাম থাকে আলগা। আর বাঁধন আলগা করে মতলববাজদের বেলাগাম হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে নিজেরাও অবৈধভাবে লাভবান হন প্রশাসনের লোক। না হলে প্রতিবছরই কেন ঈদমুখী যাত্রাপথে ত্রিশ চল্লিশ কিলোমিটারের জ্যাম হবে। কেন দ্বিগুণ দামে টিকেট কাটতে বাধ্য হবেন। কেন রেলের টিকেটের জন্য রাত দিন কাজ ফেলে কাটাতে হবে কমলাপুর রেলস্টেশনে?

এক অবসরপ্রাপ্ত আমলা ভদ্রলোক সরকারি বরাদ্দের আবাস ছেড়ে নতুন বাসা নিয়েছেন এক কলেজের লাগোয়া পাড়ায়। শুরুতে কলেজ ছুটি ছিল, তিনিও আরামে নিরালায় অবসরোত্তর জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিছুদিন পর কলেজ খুললো। শিক্ষার্থীরা অভ্যাসবশত ছুটি শেষে দেয়ালে শব্দ সৃষ্টি করে এলাকাবাসীর শান্তি বিঘ্নের কারণ হতো। তখন তিনি আমলার অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করলেন। শিক্ষার্থীদের ডেকে বললেন, "তোমরা তো বেশ আমুদে। আমার ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে গেল। তোমাদের বয়সে আমরাও এমন মজা করতাম।" তিনি ছাত্রদের একটা প্রস্তাব দিলেন- "তোমরা দেয়ালের এই রিদমিক শব্দ আমার বাড়ির সামনে একটু বেশি সময় নিয়ে করো। বিনিময়ে এক ডলার করে দেব প্রতি সপ্তাহে।"

শিক্ষার্থীরা তো এমনিতেই এ কাজ করতো । এখন সপ্তাহে এক ডলার করে আয় করতে পেরে তারা দ্বিগুণ আনন্দে সে কাজ চালিয়ে গেল। কয়েক দিন পর সেই সাবেক আমলা তাদের ডেকে বললেন, "মূল্যস্ফীতির এই সময়ে এক ডলার করে দিতে পারবো না। আধা ডলার করে দেব।" শিক্ষার্থীরা গোমড়া মুখে মেনে নিল। এর কিছুদিন পর তিনি প্রস্তাব দেন, "আধা ডলার করেও পারছি না। সিকি ডলার করে দেব।" এবার ছাত্ররা রীতিমতো ক্ষেপে গেল। বলে, "আমরা কি ভিক্ষুক? করব না আপনার কাজ।" তারপর থেকে সেই সাবেক আমলার বাড়ি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আর কোন বিরক্তি সৃষ্টিকারী শব্দ শোনা যায়নি।

এ নিছকই কৌতুক। কিন্তু মোরাল- দেশের বুনো ( সুযোগ সন্ধানী মতলববাজ) ওলদের শায়েস্তা করতে বাঘা তেঁতুল (সরকারি পদক্ষেপ) এর প্রয়োজন আমরা সবাই অনুভব করি বটে কিন্তু তা অপূর্ণই থেকে যায়।আর সাংবাৎসরিক দুর্দশাও লাঘব হয় না।

বিশৃঙ্খলা, নীতিহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তার নৈরাজ্যের বিপরীতে উন্নয়নের বার্তা নেওয়া ছাড়া প্রজা সাধারণের আর কী করার আছে? মেনে নিয়ে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া? ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা গেলেও, সমাজ রাষ্ট্রের অনাচার দূর করতে সোশ্যাল মেন্টাল ফ্লসের পরিষ্কারক খুব দরকার।