পদ্মা সেতু নিয়ে চীনা মিথ্যাচার

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকশামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
Published : 24 June 2022, 12:39 PM
Updated : 24 June 2022, 12:39 PM

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় খুশি হয়নি, এর ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন দেখে যাদের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এক সময় তারা ভেবেছিল এবং এ ধরনের দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়েছিল যে অবশেষে পদ্মা সেতুর মতো একটি বিস্ময়কর প্রকল্প বাংলাদেশের নিজ অর্থে বাস্তবায়িত হবে না। তাই তারা এই স্বপ্নের সেতু নিয়ে বহু উদ্ভট কথা বলছে গত দুই বছর ধরে। এরপর যখন তারা দেখতে পেল পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, শিগগির এটি উন্মুক্ত করা হবে, তখন তারা তাদের নীতি এবং কথার ভাব পরিবর্তন করে বলতে শুরু করলো, তারাই নাকি এই সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

এদিকে চীন আবার একটু ভিন্ন সুরে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের অর্জন এবং গৌরবকে ভুলুণ্ঠিত করার জন্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত এক খবরে প্রকাশ 'বাংলা-চীন সিল্ক ফোরাম' নামক একটি সংস্থা ২২ জুন একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করেছে আর তার জন্য পাঠানো আমন্ত্রণ পত্রে আলোচ্য বিষয় হিসাবে লেখা হয়েছে 'পদ্মা সেতু বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভের আওতায় বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার দৃষ্টান্ত'। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন চীনপন্থি রাজনীতিক, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রী দিলীপ বড়ুয়াকে, আর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের কথা লেখা হয়েছে। এছাড়াও এ অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক হিসেবে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌভাগ্যক্রমে এই অনুষ্ঠানের খবর এবং নিমন্ত্রণপত্রটি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে আসার সাথে সাথেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে যে, পদ্মা সেতু মোটেও চীনের 'রোড অ্যান্ড বেল্ট' প্রকল্পের কোন অংশ নয়, এবং এটি করা হয়েছে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে কোন দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সংস্থার কোন বিদেশি তহবিল এটি নির্মাণে আর্থিকভাবে অবদান রাখেনি। বাংলাদেশি ও বিদেশি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো উল্লেখ করেছে এটি তাদের নজরে এসেছে যে, বিভিন্ন মহল দেখানোর চেষ্টা করছে যে পদ্মা সেতু 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভে'র অংশ এবং বিদেশি অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

বাংলা-চীন সিল্ক ফোরামের এ ধরনের মিথ্যাচার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্ভট বক্তব্য থেকে কম ধৃষ্টতাপূর্ণ নয়। মির্জা সাহেব বলেছিলেন খালেদা জিয়া নাকি পদ্মা সেতুর 'ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন'। মির্জা সাহেবের উক্তির পেছনে উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের গৌরব তার দলের পক্ষে নেয়া। একই ভাবে বাংলা-চীন সিল্ক ফোরামেরও উদ্দেশ্য  হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনের অসত্য কৃতিত্ব জাহির করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং একই সাথে বাংলাদেশ সরকারের এবং দেশের মানুষের কৃতিত্বকে ম্লান করে দেয়া। যেহেতু দাওয়াতের কার্ডে অনুষ্ঠানের যৌথ উদ্যোক্তা হিসেবে চীনা দূতাবাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং চীনা রাষ্ট্রদূতকে প্রধান অতিথির মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তাই এই কুচক্রে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস সক্রিয়ভাবে আছে কিনা সে প্রশ্ন রাখাই যায়।

আয়োজকদের উদ্দেশ্য জনমনে এই মিথ্যা ধারণা দেওয়া যে, চীনা অর্থ সাহায্যে, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অধীনেই পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে, যা কিনা বাংলাদেশের কৃতিত্বকে ভুলুণ্ঠিত করার চীনা প্রয়াস। চীনা দূতাবাস এ ধরনের একটি সর্বৈব মিথ্যা উক্তির সমর্থক হয়ে অবশ্যই কূটনৈতিক বিধি-বিধান লংঘন করেছে। অবশ্য এ ধরনের ধৃষ্টতামূলক আচরণ ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূতের এই প্রথম নয়। অতীতেও বহুবার কূটনৈতিক আচরণ লংঘন করে তিনি আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ছবক দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যার জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে বাংলাদেশের ব্যাপারে 'নাক না গলানোর' পরামর্শ দিয়েছিল। একই ধরনের চেষ্টা  নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতও করেছিলেন সে দেশে চীন নিয়ন্ত্রিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য, যা শেষ পর্যন্ত বুমেরাংয়ে পরিণত হয়েছিল।

কয়েক মাস আগে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেপাল সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারকে চীনা ঋণ গ্রহণ করতে এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অংশীদার হতে বললে নেপালি কর্তৃপক্ষ শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে তার মুখের উপরই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এতে চীনা মন্ত্রী মারাত্মকভাবে অপ্রস্তুত এবং অপমানিত হন। নেপাল থেকে শূন্য হাতে ফেরার পর চীন উঠে পড়ে লেগেছে এই প্রকল্প গ্রহণে বিভিন্ন দেশকে রাজি করতে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় চীনা ঋণের ফাঁদ দেখে বহু দেশ ভয় পেয়ে এই চীনা প্রকল্প থেকে সরে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী বলা হচ্ছে চীনা এই প্রকল্প দেশটির আগ্রাসনী পরিকল্পনারই অংশ। এমনকি পাকিস্তানেও  পাক-চীন অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরাবস্থার অন্যতম কারণ হিসেবে এই পাক-চীন অর্থনৈতিক করিডোরকে দায়ী করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় এই প্রকল্পের উছিলায় চীন পাকিস্তানের গোয়েদার বন্দরের বেশ কিছু অংশ হাতিয়ে নিয়েছে, যেমনটি চীন করেছে শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর হস্তগত করে। বাংলা-চীন সিল্ক ফোরামের এই ধৃষ্টতামূলক মিথ্যাচারকে এখনই কঠোরভাবে প্রতিহত না করলে চীন মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে এই বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে যে পদ্মা সেতুর কৃতিত্ব চীন দেশের।  

চীন অনাদিকাল থেকেই এমনি একটি দেশ যে নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। জানা ইতিহাস অনুযায়ী চীনে এক সময় ছিল রাজতন্ত্র, পরে প্রজাতন্ত্র এবং সবশেষে সমাজতান্ত্রিক সরকার। বর্তমানে যা আছে তাকে কোন ফর্মুলায়ই সমাজতন্ত্র বলা যায় না, সে দেশে এখন চলছে ব্যক্তি মালিকানা এবং পুঁজিবাদের চরম প্রতিযোগিতা যা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থি। কিন্তু একইভাবে পুঁজিতান্ত্রিক দেশসমূহে যে সকল স্বাধীনতা থাকে, তাও চীনে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সোজা কথায় পুঁজিবাদী সমাজে সব খারাপ দিকগুলোই চীনে বিরাজ করছে, অথচ পুঁজিবাদের ভালো দিকগুলোর অস্তিত্ব নেই। দেশটি আগে যেমন লৌহ যবনিকা বেষ্টিত ছিল, এখনও তাই আছে। একটি পুঁজিবাদী ধনকুবের গোষ্ঠির উত্থান হলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠির অবস্থা অসহনীয়। এদের উপর চলছে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন। এদেরকে অনেকটা কৃতদাসের মতোই কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যার কারণে দেশটিতে আজ এতো উন্নয়ন। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই লৌহ যবনিকার ভিতরে কি হচ্ছে, বাইরের জগত তা জানতে পারছে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং একটি দৈনিক পত্রিকায় লেখা প্রবন্ধে 'চীনা ঋণের ফাঁদ' নামে যে কথা চালু রয়েছে, তা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বাস্তবতাকে কিভাবে অস্বীকার করা যায়, সে কথাটি তার লেখায় স্থান পায়নি। গোটা বিশ্বে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য চীন এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রধানত মহাসড়ক, রেলপথ, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, খনিজ আহরণ প্রকল্প ইত্যাদিতে এমন কঠিন শর্তে ঋণ দিচ্ছে যা এসব উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে শোধ করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না, যার কারণে তারা বিভিন্নভাবে চীনের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করা ব্যক্তিরা এই ব্যাপারে দৃঢ় ঐক্যমত পোষণ করছেন। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র জনগণ যেমন ঋণদানকারী মহাজনদের ঋণের প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে  ভবিষ্যৎ বিবেচনা না করে তা গ্রহণ করে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন, অধিকাংশ দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশও একইভাবে চীনা টাকার বস্তা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে শ্রীলঙ্কার মতোই পথে বসার কাছাকাছি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে নড়বড়ে হওয়ায় এসব প্রকল্পের কোন কোনটি সম্পন্ন হওয়ার পর প্রকল্পের আয় থেকে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ চীনা ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ে ওই প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদী কর্তৃত্ব চীনের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে কিংবা উপায়ান্তর না দেখে চীনকে নানা সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে। মহাজনদের কাছ থেকে উঁচু সুদে ঋণ নিয়ে যেমন গ্রামের দরিদ্র গোষ্ঠি কখনো উন্নতি করতে পারেনি, বরং মহাজনদের দাসে পরিণত হয়েছে, চীনা ঋণ নিয়েও অনেক দেশ একই পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কার দৃষ্টান্ত আমরা জানি। এ বছর দেশটির ৬৯০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও মাহিন্দা রাজাপাকসে চীনের কাছে ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন জানালেও, চীন সে অর্থে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রত্যাশিত আচরণ করেনি। ফলে আমরা দেখেছি, এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তথা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়।

রাষ্ট্রদূত লি জিমিং দাবি করেছেন, চীনের অর্থায়ন বাংলাদেশকে ভালো সুবিধাই দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন প্রত্যাহারের পর পদ্মা সেতুর রেল সংযোগে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগের পরিপূরক হিসেবে চীন পাশে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য প্রকল্পেও চীনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এর আগেও চীন নানা প্রকল্পে সহায়তা করেছে। সামনে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্পও রয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূত তাদের অর্থায়নে কোন 'অযৌক্তিক শর্ত নেই' বলেও উল্লেখ করেছেন। তার কথাগুলো আংশিক সত্য। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে চীন আমাদের অনেক ঋণ দিয়েছে এবং আরও ঋণ দেয়ার লোভ দেখাচ্ছে। কিন্তু তাদের ঋণের অযৌক্তিক কোন শর্ত নেই বলে রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন তা মোটেও সত্য নয়। চীনা ঋণে সুদের হার অনেক উঁচু। তাছাড়া এগুলোতে এই মর্মে শর্ত থাকে যে চীনা সরঞ্জাম কিনতে হবে, চীনা বিশেষজ্ঞ এবং কারিগর নিয়োগ করতে হবে, তাদেরই শর্তে। চীনের সাথে প্রতিটি চুক্তিতেই লেখা থাকে যে চুক্তির বিষয়বস্তু জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। চীনের কাছ থেকে করোনার টিকার ক্রয় করার চুক্তিতেও একই কথা ছিল এবং টিকার মূল্য প্রকাশ হয়ে গেলে চীন ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেলে বাংলাদেশ নিজের অর্থেই অনেকটা অবিশ্বাস্যভাবেই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশ চীন অথবা অন্য কোন দেশ থেকে কোন রকমের আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেনি। সেতু নির্মাণের জন্য যে সব চীনা সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়েছিল বাংলাদেশ নগদ টাকা দিয়েই তা চীন থেকে ক্রয় করেছে। বাংলাদেশি প্রকৌশলী এবং অন্যান্য কারিগরদের পাশাপাশি কিছু চীনা কারিগরও নিয়োগ করা হয়েছিল নগদ বেতনের ভিত্তিতে। এমনটি নয় যে চীনা কারিগরগণ স্বল্প বেতনে কাজ করেছে। সুতরাং সেখানেও চীনের কোন অবদান ছিল না। পদ্মা সেতুর নিচের তলা দিয়ে যে রেললাইন তৈরি করা হয়েছে তার জন্য বাংলাদেশ চীন এবং ভারত থেকে কিছু ঋণ নিয়েছে বটে, কিন্তু তাকে পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ বলা যায় না, কেননা সেই রেলপথ পদ্মা সেতু থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি প্রকল্প। উল্লেখযোগ্য যে পদ্মা সেতুর আদি পরিকল্পনায়, যার জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ চাওয়া হয়েছিল, তাতে রেললাইনের পরিকল্পনাটি ছিল না। রেল লাইনের কথা পরবর্তী চিন্তার ফসল এবং তাই একে কোনভাবেই পদ্মা সেতুর প্রকল্পের অংশ বলা যায় না এবং এর জন্য গ্রহণ করা ঋণ মোটেও পদ্মা সেতুর জন্য গ্রহণ করা ঋণের পর্যায়ভুক্ত হয় না। আর সেই ঋণের অনুপাতও খুবই কম। কয়েক সপ্তাহ আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন. 'চীন তাদের টাকার বস্তা দেখিয়ে আমাদের লোভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে'। 

বর্তমান সুবিবেচক সরকার অবশ্য সেই লোভের ফাঁদে পা দিচ্ছে না, যার জন্য সরকার প্রশংসার দাবিদার। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  কম গুরুত্বপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন, যার ফলে আমাদের আর চীনা ঋণের ফাঁদে পড়তে হবে না। চীনা ঋণ না নেওয়াই উত্তম বলে আমাদের অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি-কৌশল আমাদের দরকার। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু প্রণীত সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়- এই নীতি পুরোপুরি পোষণ করে আসছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কোন দেশ আমাদের উপর তাঁবেদারি করার চেষ্টা করলে অথবা মিথ্যাচারের মাধ্যমে সরকারের কৃতিত্ব এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার চেষ্টা করলে তা মেনে নিতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথার্থই বাংলা-চীন সিল্ক ফোরামের জবাব দিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তার থেকেও ব্যাখ্যা চাইতে হবে। প্রাক্তন মন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়াকেও জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন তিনি কোথা থেকে এমন উদ্ভট কথা আবিস্কার করলেন যে, 'পদ্মা সেতু চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড' প্রকল্পের অংশ। তার বা তাদের এই হ্যালোসিনেশন সম উক্তি নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রদ্রোহেরই সামিল। অবান্তর তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার উচিত প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা।