শেখ হাসিনা: হৃৎপিণ্ডের অলিন্দে যার বাংলার জনগণ, মস্তিষ্কে রাজনৈতিক দর্শন

একজন রাজনীতিবিদের তৃপ্তির জায়গা হলো জনমানুষের সঙ্গে তার বোঝাপড়া। বোঝাপড়া মানে শুধু লেনাদেনা নয়। বোঝাপড়া মানে হলো একাত্ম হয়ে যাওয়া। শেখ হাসিনা আমাদের প্রজন্মে দেখা সেই রাজনীতিবিদ।

সায়েম খানসায়েম খান
Published : 27 Sept 2022, 06:29 PM
Updated : 27 Sept 2022, 06:29 PM

বাঙালির জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর। আগামী প্রজন্মের কাছে দিনটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে ধরা দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কেননা এই দিনটিতে জন্ম নিয়েছেন উন্নত-সমৃদ্ধ-নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার স্বাপ্নিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। কোনও মানুষকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে তার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও কর্ম বিবেচনায় নেওয়ায় জরুরী। সেই জায়গা থেকে যদি দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই- জননেত্রী শেখ হাসিনা জন্ম নিয়েছেন সদ্যজাত পাকিস্তান রাষ্ট্রে, বেড়ে উঠেছেন শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন শাসন-শোষণ অত্যাচার-নির্যাতনের ফলে পাকিস্তানের গর্ভে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভ্রূণ বিকাশের সঙ্গে। আর কর্মের হিসেবে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে তার নিশ্চিত গন্তব্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

কোনও মানুষ যদি জীবদ্দশায় তার চারপাশ মুখরিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে হয়তো তার জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়। এটা যদি আমাদের মতো দেশের কোনও রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রে ঘটে তাহলে সেটা আরও বেশি সার্থক জীবনের উদাহরণ হতে পারে। আর সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি হন বঙ্গবন্ধু কন্যা তখন সমগ্র জাতি সমস্বরে সেটার স্বীকৃতি দেয়।

বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে যখন নিজের জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তখন মনের গহীনে চিন্তার অবকাশ তৈরি হয় যে, বঙ্গবন্ধুর মতো জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও কেন আমরা প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করতে পারছি না?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অবিসংবাদিত নেতৃত্বের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জন্য পৃথিবীর বুকে স্বধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় স্বাধীন রাষ্ট্রের সুবিধাভোগকারী একদল খুনি-ঘাতকচক্র সুগভীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। দেশবিরোধী পরাজিত সেই শক্তির উত্তরসূরিরাই আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। এক কথায় বললে, বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার নিরন্তর সংগ্রা্মের বিপরীতে আমরা দেখতে পাই এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য একটি মহলের গভীর ষড়যন্ত্র। অবশ্য এসব প্রতিবন্ধকতা জয় করে বাংলাদেশকে তার অভীষ্টে পৌঁছে দিতে আপসহীন মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতাকে হত্যার পর পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত হতে থাকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসিত করা হয়। সামরিক স্বৈরাচারের যাঁতাকলে গণতন্ত্রের নদীতে ভাটার টান পড়ে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর রাষ্ট্রের খড়্গ নেমে আসে। তবে জনগণ সেটা মেনে নেয়নি। জনমতকে ধারণ করে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংবেদনশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল অনুপস্থিত । এমন এক ঊষর সময়ে হৃদয় সংবেদীরূপ মন্ত্র নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে হাজির হন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাঁটিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭মে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট দর্শন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। তিনি ক্ষমতার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে রাজনীতিতে আসেননি। তার হৃদপিণ্ডের অলিন্দে বাংলার জনগণ; আর মস্তিষ্কে রাজনৈতিক দর্শন। তাই দেশের মাটিতে পা রেখে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা সেদিন  কান্নাজড়িত কণ্ঠে দৃঢ় বিশ্বাসে বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই  নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।” বেদনার সমুদ্র বুকে চেপে মুখমণ্ডল গড়িয়ে পড়া পানি সংবরণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন। রিক্ত, শূন্য ও স্বজনহীন শেখ হাসিনা পরাজিত বোধ করেননি। পিতা মুজিবের মতো মানুষের কল্যাণের ব্রত নিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কোন পর্যায়ে তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন পরিত্যাগ করেননি। বিধি-নিষেধের বেড়াজালে নির্মিত সামরিক স্বৈরাচারের রুদ্ধদ্বারে আঘাত করে গণতন্ত্রের নদীতে জোয়ার আনাই ছিল সেদিনের চ্যালেঞ্জ। শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হননি। পিতা মুজিবের আদর্শের বীজ বুকে ধারণ করে উদ্ভিদের মতো মাটি ভেদ করে যে সাহসী নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের ক্লান্তিহীন সংগ্রাম অকুতোভয় চিত্তে করে গেছেন তিনিই হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সফলকাম হয়েছেন।

শেখ হাসিনার সরকার আজ সফলতার সঙ্গে টানা তৃতীয় মেয়াদের পাশাপাশি চতুর্থ বারের মতো দেশ পরিচালনা করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই এই রাষ্ট্রসৃষ্টির ইতিহাসের দায় মোচন হয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পরে শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে বুঝিয়েছিলেন- যুদ্ধাপরাধ কী? যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া কেন জরুরী? তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন থেকে উপলব্ধি করেছিলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার না হলে ইতিহাসের দায় শোধ হবে না। চার দশকে রাজনীতির ময়দানে যুদ্ধাপরাধীদের শেকড় গভীরে প্রোথিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিস্তর ডালপালা ছড়িয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব যেখানে এদের তোষণ করে আরও পরিপুষ্ট করেছে সেখানে শেখ হাসিনা ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রম। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেছিলেন, “বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবেই, হবে”।

শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার হয়েছে। একমাত্র শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেছিলেন বলেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ তার রাজধানীর সঙ্গে  দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে। শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ আজ তাদের আপন ঠিকানা পাচ্ছে। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করায় বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছিলেন বলেই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ‘ব্লু ইকোনমি’র নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, পদ্মা সেতুর পাশাপাশি মেট্রোরেল,  রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল,  এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ৪ লেনে উন্নীতকরণসহ একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বের কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলার অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় দেশের মানুষের সার্বিক জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীর বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে শেখ হাসিনা সরকার ইতোমধ্যেই ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তথা রূপকল্প-২০৪১’বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশকে নিরাপদ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু  বদ্বীপ হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০’ ঘোষণা করেছে সরকার। বর্তমান সময়কে ধারণ করে আগামী প্রজন্মের অধিকার নিশ্চিত করার মতো দিক-নির্দেশনা দিতে পারার অসাধারণ সক্ষমতার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্মের নিকট কালজয়ী নেতৃত্ব হিসেবে বিবেচিত হবে।  সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতেই বাংলাদেশ উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

একজন রাজনীতিবিদের তৃপ্তির জায়গা হলো জনমানুষের সঙ্গে তার বোঝাপড়া। বোঝাপড়া মানে শুধু লেনাদেনা নয়। বোঝাপড়া মানে হলো একাত্ম হয়ে যাওয়া। জনমানসকে আয়না হিসেবে বিবেচনা করে নিজের প্রতিচিত্রকে মূল্যায়ন করা; আর এর মাধ্যমে স্থায়ী প্রতিকৃতি স্থাপন করা। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সফল হতে হলে জনগণের কল্যাণকে ব্রত হিসেবে নিয়ে সমগ্র দেশকে নিজের হাতের তালুর মতো চিনতে পারার সক্ষমতা অর্জন করা। একজন রাজনৈতিক নেতা যখন এটা করতে পারেন তখনই তিনি হয়ে ওঠেন একজন পরিণত রাজনীতিবিদ।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের প্রজন্মে দেখা সেই সফল রাজনীতিবিদের একমাত্র উদাহরণ। যিনি রাজনীতির সূত্রকে রপ্ত করেছেন প্রজ্ঞা, ধ্যান ও কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে দর্শন নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন সেই দর্শন বাস্তবায়নের জন্য একনিষ্ঠ সাধকের ন্যায় নিরন্তর সাধনা করে চলেছেন।  সেই দর্শনের মূল লক্ষ্য দেশের স্বার্থ রক্ষা ও জনগণের কল্যাণ সাধন। আর সেটা করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার দর্শন সর্বকালের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত হবে। এমন নেতৃত্বের জন্মদিন সমগ্র জাতির জন্য শুভক্ষণ। প্রত্যাশা রাখি, এই শুভক্ষণে বাঙালি জাতি একাত্ম হয়ে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে প্রার্থনা রাখবে।