Published : 29 Aug 2019, 10:30 PM
১৮ অগাস্ট ঝালকাঠি উপজেলার এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম কামাল হোসাইন কর্তৃক তার ছাত্রীর দীর্ঘদিন যাবত ধর্ষিত হওয়ার খবরটি সর্বশেষ আমার চোখে পড়েছে। ইসলাম বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ককেই অনুমোদন দেয়নি, সেখানে ধর্ষণের তো প্রশ্নই উঠতে পারে না। ধর্ষণ ইসলামের দৃষ্টিতে মহাপাপ। কিন্তু বাংলাদেশে একের পর এক ধর্মীয় গুরুরা সে কাজটাই করে চলেছে। বেশ কয়েকজন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মসজিদের ইমাম শুধু তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের না, তাদের মায়েদের পর্যন্ত রেহাই দেয়নি। আর একটা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আলোচিত খুন-ধর্ষণ ঘটনার একটা এ ঘটনা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু খুন ও ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন সেখানে।
তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কাছে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত ও আসামীকে আইনানুগ বিচারের মুখোমুখি করতে। ধর্ষণ এখন বাংলাদেশের একটা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছ। পৃথিবীর সব দেশ ধর্ষণমুক্ত সেটাও না। কিন্তু তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ধর্ষণ বেড়ে গেছে এটা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ছাড়া আর কিছু না।
আমি কয়েকজন পুরুষ অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা আমাকে বলেছেন, 'শুধু যে মাদ্রাসার শিক্ষকরা খুন ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সেটা নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ণের শিকার হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ পাচ্ছে না লোকলজ্জার ভয়ে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রগুলোও এর বাইরে না। বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন অধস্তন কর্মচারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও যৌন নিপীড়ণের অভিযোগ এসেছে। কবি-সাহিত্যিক-লেখকরাও হয়তো এর বাইরে না। তবে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো বিবেচনায় আনলে মাদ্রাসা শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। তারা একাধিক ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের যৌন উৎপীড়ন করেছে। যারা ধর্ষিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই পর্দানশীল ছিলেন। তাদেরকে হিজাব পরতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে এই জাতীয় অভিযোগও করা যাবে না যে এসকল ছাত্রীরা বা মহিলারা তাদের শিক্ষকদের যৌন উত্তেজক পোশাক পরে উত্তেজিত করেছে।
আমারকথা হচ্ছে কেউ যদি যৌন উত্তেজক পোশাক পরে তাতে আমি উত্তেজিত হবো কেন? সামাজিকভাবে, ধর্মীয়ভাবে আমার উপরওবিধিনিষেধ আছে কারো সাথে অসাদারচণ না করার। এই জন্যই সংযমের কথা বারবার বলাহয়েছে। আমারও তো মনে প্রাণে সেই সংযম থাকতে হবে।
বর্তমানেযে পরিমাণ ধর্ষণ বেড়ে গেছে সেক্ষেত্রে এটা বলা যেতে পারে হিজাব বা ইসলামী পোশাকতার সমাধান না। বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার দেশেরমধ্যে একটা। সেখানে যদি একটা মানুষকে বোরখা পরে চলতে হয় এটা নিঃসন্দেহে কষ্টকর।তারপরেও কোন মানুষ যদি স্বেচ্ছায় হিজাব বা বোরকা পরে চলতে চান এটা তাদের একান্তনিজস্ব ব্যাপার। আমার বিষয় কারোর ব্যক্তিগত কোনো পছন্দে হস্তক্ষেপ করার জন্য না।আমি শুধু একথা বলতে চাচ্ছি পর্দা করেও মহিলারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারছেন না।
রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কার কবিতার কথা আপনারা অনেকেই জানেন
তখন ধীরে চামার-কুলপতি
কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ,
"বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।
নিজের দুটি চরণ ঢাকো,তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।'
আমি এর আগে একটা ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছিলাম যে, একজন মহিলাকে পুরোপুরি পর্দা দিয়ে ঢেকে দেবার চেয়ে জরুরি, পুরুষের মাত্র ২/৩ ইঞ্চি জায়গা চোখের উপর পর্দা।
তাহলে মহিলাদের সৌন্দর্য দেখে তাদেরকে নরপশুর মত সেই সৌন্দর্যের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে না। একজন শিক্ষা-কর্মকর্তার সে অংশটুকু খুব পছন্দ হয়েছিল, তিনি সে রকমই মন্তব্য করেছিলেন।
একজন পুরুষকেও সংযমী হতে হবে। ইসলামসহ সকল ধর্মেই সংযমের কথা বলা হয়েছে। সামাজিক ও নীতি শিক্ষার মধ্যেও সেই কথাটা বারবার বলা হচ্ছে। আমাদের চোখ ও মন সংযমী হলে এ জাতীয় অপরাধগুলোকে আমরা খুব সহজেই এড়িয়ে যেতে পারি।
প্রতিবছরই আমি পরিবারসহ গ্রীষ্মকালে অন্তত একবার অবকাশ যাপনে যাই। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের সমুদ্রসৈকতে মেয়েরা খুব খোলামেলা পোশাকে ঘোরাফেরা করছে, সাঁতার কাটছে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েরা খোলামেলা পোশাকে রাস্তায় চলাফেরা করে গরমের প্রকোপে। এইসব খোলামেলা পোশাকের মেয়েদের উপর ইউরোপের পুরুষরা ও আমরা যারা ইউরোপে থাকি তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছি না। এখানে মহিলারা অহরহ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন না। আমরা এবছর পয়লা অগাস্ট থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত মাল্টাতে ছিলাম।
প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক আসছে সে দেশে, কিন্তু সেখান থেকে কেউ ধর্ষিত হয়ে ঘরে ফিরছে না। আমি যে এই নিবন্ধটা লিখব এর একটা প্রস্তুতি আমার ছিল। হাতে গোনা কিছু ধর্ষণের ঘটনা ইউরোপে ঘটেছে। তবে সেটা যৌন উত্তেজক পোশাকের কারণে না। যদি তা হত তাহলে সমুদ্র সৈকতে এ জাতীয় ঘটনা কয়েক শ ঘটতো প্রতিদিন। এখানে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদেরকে নীতি শিক্ষা এবং সামাজিক শিক্ষায় সঠিকভাবে শিক্ষিত করে তোলা হয়েছে। তারা নারীর সম্মান ও স্বাধীনতা বোঝে। নারী সঙ্গিনী, নারী মা, নারী কন্যা, নারী বোন, আর নারী যে বন্ধু সেটাও বোঝে। এসবের চেয়েও বেশী করে বোঝে ধর্ষণ ঘৃণ্যতম অপরাধ। সামাজিক শিক্ষার কারণেই তারা এগুলো বোঝে।
ধর্মীয় শিক্ষার বাধ্যবাধকতা শুরু হয় ১১/১২ বছর বয়স থেকে কিন্তু কিন্ডারগার্টেন শুরু হয় তিন বছর বয়স থেকে। অতএব সামাজিক শিক্ষা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর একটা সমাজে শুধু একটা ধর্মের মানুষ বসবাস করে না। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ধর্ম। ভিন্ন ধর্মে ভিন্ন রীতি ভিন্ন নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সামাজিক আইন নিয়ম-কানুন সব দেশে এক। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে সামাজিক আইন কানুনে আমাদের শিশুদের এবং জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা তোলা জরুরী। আর প্রত্যেকটা অপরাধ সংঘটিত হলে আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীকে অবহিত করা জরুরি। সেইসাথে জরুরি সামাজিকভাবে এর প্রতিরোধ করা। এখন ব্যাপারটা এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, সরকার কয়েকজনকে ফাঁসি দিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। তবে সরকারকে এখন থেকে বিভিন্ন সমাজ সংস্কারমূলক পদ্ধতি হাতে নিতে হবে। যাতে আস্তে আস্তে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটে। তবে কোনওভাবেই এটাকে আজকে শুরু করে কালকে নির্মূল করা যাবে বলে আমার মনে হয় না। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে আগামী ২০ বছরে এই পরিস্থিতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্মের আইন-কানুনকে ভিন্নভাবে অর্থাৎ পুরুষের সুবিধার্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। সৌদি আরবে হালাল নৈশ ক্লাব চালু হয়েছে। এক সময় কিন্তু নৈশ ক্লাবকে ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতি হিসাবেই গণ্য করা হয়েছে। তুর্কিতে হালাল যৌন বিষয়ক খেলনা বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই না তুর্কিতে হালাল পতিতালয় পর্যন্ত আছে। বিভিন্নভাবে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে পুরুষের ভোগ বিলাসকে অব্যাহত রাখতে এগুলো চলছে। হালাল পতিতালয় বা মুতাবিয়া (নিকাহ আল মুতাহ) এগুলো কিন্তু শুধু পুরুষের জৈবিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। নৈতিকভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা একজন সুস্থ-মানুষের কাছে থাকতে পারে না। হালাল পতিতালয়ের কোন পতিতা যদি গর্ভধারণ করেন সেক্ষেত্রে কী হবে? সৌদি আরবে যে মুতাবিয়া পদ্ধতি চালু আছে তার কারণে যদি কোন নারী গর্ভধারণ করেন সেক্ষেত্রে পুরুষের কোনও দায়-দায়িত্ব নেই।
উপরের ভোগ-বিলাসের দু'পদ্ধতির কারণে যে সব মহিলারা ব্যবহৃত হচ্ছেন তারাও কারো সন্তান, কারো বোন, কারো বন্ধু বা প্রতিবেশী। হালাল পদ্ধতির কারণে এরা গর্ভবতী হয়ে পড়লে দায় শুধু তার, তিনি সমাজে অস্পৃশ্য। একজন মানুষ হিসাবে আমাদের কি এই ব্যবস্থা গুলোকে মেনে নেবার কোন সুযোগ আছে? এই সম্পর্কগুলো কি বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত না?
নর-নারীরজীবনে শারীরিক সম্পর্কের আবেদনকে অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই। কিন্তু এজন্য একজননারী ধর্ষিত হবে সেটা কারো কাম্য হতে পারে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন বয়সেপুরুষ নারীর শারীরিক মিলনকে বৈধতা দিয়েছে। এটা ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। সুইডেনে ১৭বছরে পড়লে অর্থাৎ ১৬ বছর ১ দিন, সাইপ্রাসে১৭ বছর, আয়ারল্যাণ্ডে ১৭ বছর, তুরস্কে ১৮ বছর এবং ভ্যাটিকানসিটিতে ১৮ বছর। অস্ট্রিয়ায় ১৪ বছর ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে। পর্তুগাল এবংবাহরাইনে ২১ বছর। সম্মতি আইনের নিম্ন বয়সের দেশগুলির মধ্যে নাইজেরিয়ায়সর্বনিম্ন ১১ বছর। এর পরে অ্যাঙ্গোলা এবং ফিলিপিন্স রয়েছে ১২ বছর, এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান ১৩ বছর।
এশিয়াও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে আইনত যৌনমিলনের আগে ব্যক্তিদের বিবাহ করা প্রয়োজন।এর মধ্যে লিবিয়া, আফগানিস্তান এবংসৌদি আরব অন্তর্ভুক্ত, এগুলি সবই লিঙ্গ এবং যৌনতা সম্পর্কিতবিষয়গুলিতে অত্যন্ত রক্ষণশীল হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশেও বিবাহ বহির্ভূত যৌনসম্পর্ককে বৈধতা দেয় না। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, অনেকক্ষেত্রেই মনে হবে ক্রিকেটার ও অভিনেতা/অভিনেত্রীরা এর বাইরে। একজন অভিনেত্রীর বিবাহবর্হিভূত শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও এখন পর্যন্ত অন লাইনে বিদ্যমান। কিন্তু এজন্যতিনি কখনও জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার হয়েছেন বলে জানা নেই। ইন্ডিয়ার উচ্চ আদালতআনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বর্হিভূত নারী-পুরুষের একত্রে বসবাসকে বৈধতা দিয়েছে।বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক বৈধতা না দিলেও এ ব্যাপারে আইনের প্রয়োগ খুবই দুর্বল। আমারজানামতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে নারী-পুরুষেরজন্য দ্বৈত আইন। যা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। যেহেতু বাংলাদেশে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বৈধ না, সেহেতু বিবাহ উপযুক্ত পাত্রীর বয়স১৮ আর পাত্রের বয়স ২০ বছর সরকার নির্ধারণ করেছে। যা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়।একজন পুরুষ কি ১৮ বছর বয়সে শারীরিক সম্পর্কে সক্ষম না? বাংলাদেশেঅনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১৩/১৪ বছরের বালকেরাও ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে এইআইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার কতটা জনসাধারণের মতামত নিয়েছে বা সমাজবিজ্ঞানীদেরসঙ্গে মতবিনিময় করেছে আমার জানা নেই। যদি করত তাহলে আমার মনে হয় নাঅসামঞ্জস্যপূর্ণ এই আইন আলোর মুখ দেখত। তবে পুরুষকে দেরিতে বিবাহ অনুমতি দেয়ারকারণে নিঃসন্দেহে সমাজে কিছুটা হলেও যৌন অপরাধ বাড়বে। যেহেতু বিবাহ বহির্ভূতসম্পর্ক অবৈধ সেহেতু ১৮/২০ বছরে বিয়ের অনুমতিও এক হিসাবে বিলম্বিত। যেখানে এশিয়ারকিছু দেশই ১২/১৩ বছর বয়সে শারীরিক সম্পর্কের অনুমতি দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেরউচিৎ ছিল আঠার বছরের আগেই বিবাহ অনুমতি দিয়ে আঠার বছর বয়সের আগে বিবাহে অনুৎসাহিতকরা। সেক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা প্রয়োজনে তাদের সন্তানদের আঠারবছরের আগেই বিয়ে দিতে পারত।
বাংলাদেশে কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষককে বিয়ে করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে ধর্ষণের কারণে মহিলারা গর্ভধারণ করেছেন সেক্ষেত্রে। আর যুক্তি দেখানো হয়েছে একটা সন্তান পিতা ছাড়া বেড়ে ওঠা কতটা কঠিন। কিন্তু সরকার এই ব্যাপারটা কখনোই মাথায় আনেনি একজন মহিলার পক্ষে ধর্ষকের সঙ্গে সারা জীবন কাটানো কতটা কঠিন। একজন ধর্ষকের সঙ্গে তাকে ভালবাসার অভিনয় করতে হয় প্রতিদিন। মনস্তাত্ত্বিকভাবে এটা কত বড় শাস্তি তা সরকার নামক গণ্ডার কখনো বুঝবে না। এ হচ্ছে অনেকটা বাবার খুনির সাথে চাপের মুখে বন্ধুত্ব করার মত। একজন সন্তান কেন বাবা ছাড়া বড় হতে পারবে না? অনেক ক্ষেত্রেই বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে সন্তান কি বড় হচ্ছে না? তার কি বাবার বা মার পরিচয় থাকছে না? ধর্ষক পিতাই তার পিতা সে পরিচয়েই বড় হবে। কিন্তু তার মানে এ না যে তার মাকে একজন ধর্ষকের সাথে সারা জীবন কাটাতে হবে।
'আমাদের দেশ তো এখন অনেক ধনী'- সে প্রচারই চারিদিকে চলছে ক্ষণে ক্ষণে। তাহলে সরকার কেন এ শিশুদের দায়ভার নিতে পারছে না? পক্ষান্তরে ধর্ষককে বিয়েতে উৎসাহ দিচ্ছে। আর একারণেই মাদ্রাসা শিক্ষকসহ অনেকেই ধর্ষণে উৎসাহিত হবে। যদি মাদ্রাসা শিক্ষকের কোন ছাত্রী এজন্য গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে তার সোনায় সোহাগা। বিয়ে করে ফেলবে ছাত্রীকে, তাহলে জেল মাপ। ঘরে যদি আরেকটা বউ থাকে তাতেও অসুবিধা নেই। ইসলাম একাধিক বিবির অধিকার পুরুষকে দিয়েছে।
আমি পূবাইল আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় মহাবিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক সমাজ বিজ্ঞানী ও জার্মান একজন সমাজবিজ্ঞানীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি।
তাদেরকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, যে এই জাতীয় সামাজিক অপরাধগুলো কেন ঘটছে? এইসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিধি বিধান, অনুশাসন অনুসরণ, মোটকথা ধর্মীয় শিক্ষা কি এটাকে রহিত করতে পারে? নাকি এই ক্ষেত্রে সামাজিক শিক্ষা জরুরি?
এরা দুইজনই আমাকে বলেছেন, এখানে সামাজিক শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। কারণ একটা সমাজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে সেক্ষেত্রে সামাজিক শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: লেখক