আসিয়ানের ‘শান্তি পরিকল্পনায় মিয়ানমার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’

আসিয়ানের চলতি সপ্তাহের সম্মেলন থেকে জান্তাপ্রধানকে বাইরে রাখার ব্যাপক সমালোচনা করলেও মিয়ানমার বলছে তারা আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘যতটুকু পারা যায়’ সহযোগিতা করবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 11:05 AM
Updated : 24 Oct 2021, 11:05 AM

রোববার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেওয়া ঘোষণায় দেশটির সামরিক জান্তা বলেছে, তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির সমর্থক এবং এপ্রিলে যে ৫ দফা নিয়ে ঐকমত্য হয়েছিল, তার বাস্তবায়নে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানকে সঙ্গে সহযোগিতা করবে।

আসিয়ান ও মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া ওই শান্তি পরিকল্পনায় চীনের পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোরও সমর্থন ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এ পরিকল্পনায় ছিল সহিংসতার অবসান, আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো, মিয়ানমারে মানবিক ত্রাণ সাহা্য্য পৌঁছানোর পথ তৈরি এবং নিয়োগ দেওয়া এক বিশেষ দূতের দেশটিতে অবাধ বিচরণের সুযোগ নিশ্চিত করা।

কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছানোর পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ব্যর্থ হওয়ায় আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত ১৫ অক্টোবর জোটের শীর্ষ সম্মেলন থেকে এ জান্তাপ্রধানকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার আসিয়ানের কঠোর সমালোচনা করে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। তারা আঞ্চলিক জোটের বিরুদ্ধে ঐকমত্য ও কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি থেকে সরে আসার অভিযোগ করে।

মিন অং হ্লাইংয়ের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এক ব্যক্তিকে আসিয়ান সম্মেলনে পাঠানোর জোটের প্রস্তাবও খারিজ করে দিয়েছে তারা। মিয়ানমারের এ অবস্থানের বিষয়ে আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি দেশ ব্রুনেই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

শনিবার থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও ‘বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায়’ এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে রাজি হননি।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তেইকু ফাইজাসিয়াহ বলেছেন, সম্মেলনে কে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করবে, এই বিষয়ে আসিয়ানের ঐকমত্য ‘সব আসিয়ান সদস্যের জন্য সাধারণ নির্দেশিকা’।

সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানকে বাইরে রাখার এ ‘নজিরবিহীন অপমান’ এমন এক জোট করেছে, যাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সদস্য দেশের সরকারগুলোর বর্বরতা মোকাবেলায় নিস্পৃহ ও অকার্যকর ভূমিকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

মিয়ানমারে ১ ফ্রেবুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলা দমনপীড়নে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নিহত হয়েছে, আটক করা হয়েছে কয়েক হাজারের বেশি মানুষকে। অনেকেই মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও আন্দোলনকর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অত্যধিক বলপ্রয়োগের অভিযোগও আছে।

জান্তা বলছে, যারা নিহত হয়েছে তাদের অনেকেই ‘সন্ত্রাসী’, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর। গত সপ্তাহে জান্তাপ্রধানও বলেছেন, বিরোধী বাহিনীগুলোই দেশে বিরাজমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত করছে।

আসিয়ানের বিশেষ দূত, ব্রুনেইয়ের এরওয়ান ইউসুফ চাইছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করতে, কিন্তু জান্তা সরকার তাতে রাজি হচ্ছে না। তাদের ভাষ্য, আটক সু চির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আছে, তাই তার সঙ্গে দেখা করতে করতে দেওয়া যাবে না।

অপ্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জাপানি গণমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, সামরিক জান্তা এরওয়ানকে তারা যেসব বিরোধী সংগঠনকে ‘বেআইনী’ ঘোষণা করেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে সতর্ক করেছে। এসব সংগঠনের মধ্যে গণতন্ত্রপন্থি ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টও আছে।

এ প্রসঙ্গে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ও এরওয়ানের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

রোববারের ঘোষণায় মিয়ানমারের শাসকরা গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় অভ্যুত্থানের পর তাদের দেওয়া পাঁচ দফা পরিকল্পনার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, তারাই মিয়ানমারে বৈধ শাসক এবং তাদের ক্ষমতা দখল কোনো অভ্যুত্থান নয় বরং সু চির পার্টির কারণে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ও আইনি হস্তক্ষেপ।