কোভিড: ভারতে টিকা গ্রহণে পিছিয়ে নারীরা

ভারতে কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীদের পিছিয়ে পড়ার পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদেও টিকা নেওয়ার হার কম দেখা গেছে।

নিউজ ডেস্ক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2021, 06:47 AM
Updated : 9 June 2021, 06:47 AM

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে মঙ্গলবারের ওই সরকারি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলা হয়, ভারতে টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন ১০ কোটি ১০ লাখ মানুষ। যেখানে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ১৭ শতাংশ বেশি।

এছাড়া সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী টিকার অন্তত একটি ডোজ পেয়েছে এমন জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশও পুরুষ।

রাজধানী দিল্লিসহ উত্তর প্রদেশের মতো বড় রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অনেক অঞ্চলে টিকা পাওয়ার সংখ্যায় নারী ও পুরুষের এই ব্যবধান আরও বেশি। কেবল দক্ষিণ ভারতের কেরালা এবং মধ্যাঞ্চলের ছত্তিশগড়েই পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি টিকা পেয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সরকারি একটি বড় হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট প্রশান্ত পান্ডে বলেন, “আমরা শহরে এবং গ্রামে নারীর আগে পুরুষকেই টিকা নিতে বেশি আগ্রহী দেখছি, কারণ পুরুষকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়, যেখানে নারীরা ঘরের কাজেই থাকেন।”

চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের টিকা নিলে নারীদের পিরিয়ডে ব্যাঘাত ঘটে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায় এমন গুজবের কারণেও নারীরা টিকা নিতে অনাগ্রহী। সরকার অবশ্য এমন উদ্বেগকে খারিজ করে দিয়েছে।

নয়াদিল্লির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শুধা নারায়ণ বলেন, “ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের টিকার গুরুত্ব বোঝাতে সরকারের সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো উচিত এবং টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

টিকা নিতে নারীদেরও এগিয়ে আসা উচিত, নইলে এই ব্যবধান আরও বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।

১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা ৬ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের কাছে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের এই বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

গুজরাট এবং পাশের রাজ্য রাজস্থানের কিছু নারী ঘরে ঘরে টিকা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলছে, সন্তানদের রেখে তারা হাসপাতালে যেতে পারবে না।  

গুজরাটের ভাদনগরে চার সন্তানের জননী লক্সমিবেন সুথার বলেন, “আমি লেখাপড়া জানি না… আমি কিভাবে টিকার জন্য নিবন্ধন করব। সরকারের উচিত আমাদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া।”

ভারতের টিকা নীতিতে বেশ কয়েক দফায় পরিবর্তন আসলেও কেন্দ্রীয় সরকার ঘরে ঘরে টিকা দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কেবল জরুরি দরকারেই টিকা দেওয়া হবে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা দেখতে টিকা গ্রহীতাকে কিছু সময়ের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

সরকারের তথ্য বলছে, গ্রামীণ জনপদের তুলনায় ভারতের নগরগুলোতে দ্রুত হারে কোভিড- ১৯ টিকা দেওয়া হচ্ছে। ধনী নগরগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের চেয়ে টিকার ডোজ বেশি কেনা তার একটি কারণ।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টিকা নীতিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে জানান, ২১ জুন থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। অনলাইন নিবন্ধন নিয়ে অভিযোগের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও বাড়ানো হবে।

ভারতে এখন পর্যন্ত ২৩ কোটি ৩৭ লক্ষ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। সংখ্যার বিচারে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের অবস্থান। কিন্তু ৯৫ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাত্র ৫ শতাংশ টিকার দু্টি ডোজ পেয়েছেন।

সংক্রমণের সংখ্যায় বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের অবস্থান। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে এ পর্যন্ত দুই কোটি ৯০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৩০৯ জনের।