সামরিক প্রশিক্ষণ, বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে মিয়ানমারে গ্রেপ্তার ৩৯

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী জাতিগত সংখ্যালঘু একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে চেষ্টা এবং বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের পেছনে জড়িত সন্দেহে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 11:57 AM
Updated : 12 May 2021, 11:57 AM

বুধবার সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন শহরে সরকারি কার্যালয় ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একাধিক ছোটখাট বিস্ফোরণের দেখা মিলেছে।

কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এর দায় স্বীকার না করলেও সামরিক জান্তা মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া লোকজনকে সেসব বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে আসছে।

এর মধ্যে এক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ৪৮টি ‘হাতে বানানো মাইন’, টিএনটির ২০টি স্টিক, ডিটোনেটর, ফিউজসহ বেশকিছু জিনিস জব্দ করেছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার।

বিস্ফোরকজাতীয় আরও যেসব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে তার মধ্যে বারুদও আছে।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে বিদ্রোহী একটি গোষ্ঠীর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে চেষ্টা করা কয়েকজনও আছে, বলেছে সংবাদমাধ্যমটি।

গ্রেপ্তার ৩৯ জনের মধ্যে গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার যাদের নাম প্রকাশ করেছে তাদের একজন খান্ত সিথু; তাকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন নিরাপত্তা বাহিনী বাড়িতে অস্ত্রের খোঁজে অভিযান চালিয়েও কিছু পায়নি বলে জানিয়েছেন তার এক আত্মীয়।  

নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া ওই আত্মীয় বলেছেন, খান্ত সিথু প্রথমদিকে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভগুলোতে যোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করলে তিনি আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

রয়টার্স লিখেছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে মিয়ানমারে জনগণের ওপর যেসব আদেশ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা মানাতে দেশটির সেনাবাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিক্ষোভ, ধর্মঘট এবং আইন অমান্য আন্দোলন দেশটির আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাবাণিজ্যকেও পঙ্গু করে দিয়েছে।

সামরিক জান্তার নির্মম দমনপীড়নের মুখে দেশটির গণতন্ত্রকামী অনেকেই এখন দুর্গম সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে সক্রিয় জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে চাইছেন।

মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চেয়ে দশকের পর দশক ধরে লড়াই করে আসছে।

দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগন, মধ্যাঞ্চলীয় বোগোসহ একাধিক শহর, দক্ষিণের মোন রাজ্য এবং মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলে সমাবেশ ও রাতের আঁধারে আলো জ্বালিয়ে অভ্যুত্থানের শততম দিনেও আন্দোলনকারীরা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট থেকে জানা গেছে।

মিয়ানমারের আন্দোলনকারীরা এখন জান্তাবিরোধী জোটের ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারকে (এনইউজি) সমর্থন দিচ্ছে।

এনইউজি কয়েকদিন আগেই ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ নামে নতুন একটি বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।

দেশটিতে ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান আন্দোলনে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৭৮৩ জন নিহত ও ৩ হাজার ৮৫৯ জন আটক হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স।