কোভিড: মা-বাবা অস্ট্রেলিয়ায়, ৫ বছরের মেয়ে ভারতে আটকে

প্রায় দেড় বছর আগে পাঁচ বছরের মেয়ে জোহানাকে সর্বশেষে দেখেছিলেন দৃশা-দিলিন দম্পতি। ছোট্ট জোহানার মত আরো অন্তত ১৭৩টি শিশু বাবা-মা বিহীন ভারতে আটকা পড়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার অপেক্ষায় আছে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2021, 09:46 AM
Updated : 8 May 2021, 09:46 AM

বিবিসি জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ ‍বাবা-মার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জোহানার।

ওই সময় তারা মালয়েশিয়ায় বসবাস করতেন এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। জোহানার দাদা-দাদী ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় বসবাস করেন। জোহানা যেন তাদের সঙ্গে লম্বা ছুটি কাটাতে পারে তাই তার বাবা-মা তাকে ভারতে রেখেই মালয়েশিয়া ফিরে যান এবং অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কয়েক মাস পরই তাদের সিডনি যাওয়ার কথা।

হঠাৎই পুরো বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর কবলে পড়ে। মহামারীর বিস্তার রোধে একের পর এক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিতে শুরু করে। জোহানাদের যে ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া ফেরার কথা ছিল সেটি বাতিল হয়ে যায়।

সময় গড়াতে থাকে, জোহানার পরিবার যতগুলো ফ্লাইট বুকিং দিয়েছিলো সব একে একে বাতিল হয়ে যায়।

জোহানাদের মালয়েশিয়ার ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তাই তার বাবা-মা তাকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া চলে যান। জোহানা একা আটকে পড়ে ভারতে। বর্তমানে সে তার দাদা-দাদীর সঙ্গে আছে।

জোহানার পরিবার ভারত থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের ব্যবস্থা করা ফ্লাইটে মেয়েকে নিজেদের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জোহানার বয়স ১৪ বছরের কম হওয়ার তাকে একা ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কোয়ান্টাস এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষও জোহানাকে অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণের অনুমতি দেয়নি।

এদিকে দৃশা বা দিলিনও জোহানাকে নিতে ভারতে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়ার চেষ্টা করেনি। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট অনেক কম থাকায় তাদের আটকা পড়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তখন ভারত থেকে প্রায় নয় হাজার মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। তারা ওই দলে যোগ দিতে চাননি।

দৃশা ও দিলিন শেষ পর্যন্ত একটি প্রাইভেট কোম্পানির ব্যাঙ্গালুরু থেকে সিডনিগামী একটি চার্টার্ড প্লেনে মেয়ের জন্য একটি আসন বুকিং দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। যারা জোহানাকে অভিভাবক ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন। গত ৬ মে সেটির সিডনি পৌঁছানোর কথা ছিল।

কিন্তু ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক রূপ নেওয়ায় অস্ট্রেলিয়া সরকার ভারত থেকে সে দেশে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাতিল হয়ে যায় জোহানার ৬ মে’র ফ্লাইট।

বিবিসিকে দিলিন বলেন, ‘‘সেটাই ছিল আমাদের শেষ আশা, আমরা সব ভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। আমরা আক্ষরিক অর্থেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কখনো কখনো আমরা আশার সামান্য আলো দেখতে পাই, কিন্তু তারপরই আমাদের এভাবে হতাশ হতে হয়।”

দৃশা এবং দিলিন শুক্রবার তাদের এই দুর্দশার কথা অস্ট্রেলিয়ার সেনেট কমিটিকে জানিয়েছেন। এই কমিটি ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের দেশে ফেরাতে সরকার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখছে।

শুনানিতে ‍দৃশা বলেন, তারা যে প্রাইভেট কোম্পানির চার্টার্ড প্লেন ভাড়া করেছিলেন সেখানে আরো সাতটি শিশুর অভিভাবকহীন ভ্রমণ করার কথা ছিল। ওই শিশুদের কারো কারো বয়স জোহানার চেয়েও কম।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই পরিবারগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেন।

দিলিন বলেন, ‘‘তাদের সবার পক্ষ থেকে আমি প্রার্থনা করছি। দয়া করে ওই সব শিশুদের অভিভাবকহীন ভাবেই সরকারি ব্যবস্থাপনার ফ্লাইট বা প্রাইভেট চার্টার্ড প্লেনে ভ্রমণের অনুমতি দিন।”

অস্ট্রেলিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লিনেট উড বলেন, শুধু শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যাবে না। তবে আটকে পড়া শিশুদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে সরকার সরাসরি ওইসব শিশুদের পরিবারের সঙ্গে কাজ করছে।

এদিকে ভারতে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার ব্যারি ও’ফারেল শুনানিতে বলেন, ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি শিশুকে অভিভাবকহীন ভাবে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া ফেরত পাঠানো হয়েছে।