মিয়ানমারে ৩ বিক্ষোভকারী নিহত, দোকানপাট ও কারখানা বন্ধ

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলকালে অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2021, 10:14 AM
Updated : 8 March 2021, 02:04 PM

সোমবার ফেইসবুকে পোস্ট করা ছবিতে উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাইতকিইনার রাস্তায় দুই ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে আর ইরাবতীর নদীর বদ্বীপ এলাকায় আরেকজন নিহত হয়েছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এদিন বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনে দোকানপাট, কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ ছিল।

মাইতকিইনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে, ওই সময় নিকটবর্তী ভবনগুলো থেকে গুলি ছোড়া হলে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।

মৃতদেহগুলো সরাতে সাহায্য করা একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, মাথায় গুলি লাগার পর দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আরও তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।    

প্রত্যক্ষদর্শী ২০ বছরের একজন তরুণ বলেন, “কতোটা অমানবিক, নিরস্ত্র বেসামরিকদের হত্যা। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার আমাদের আছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভস্থলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও কারা গুলি ছুড়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার ছিল না।

রাজনৈতিক আন্দোলনকারী ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরাবতী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলের শহর ফিয়ার পোনে বিক্ষোভ চলাকালে অন্তত এক প্রতিবাদকারী নিহত ও দুই জন আহত হয়েছেন। 

ফেইসবুকে পোস্ট করা ভিডিও অনুযায়ী, এদিন ইয়াঙ্গনের পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ও অন্য বেশ কয়েকটি শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর দাউইতে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা দিয়েছে।

জান্তার নিন্দা জানাতে বিক্ষোভকারীরা পতাকা এবং কিছু কিছু এলাকায় নারীদের ব্যবহৃত পোশাক হাতেমাইন ও লুঙ্গি দুলিয়ে জান্তার নিন্দা জানায়। কোথাও কোথাও নারীদের ব্যবহৃত লুঙ্গি রাস্তার উপর লাইন ধরে টাঙিয়ে রাখে।

মিয়ানমারের ঐহিত্য অনুযায়ী নারীদের এসব পোশাকের নিচ দিয়ে যাওয়া পুরুষের জন্য অমঙ্গলজনক। পুলিশ ও সৈন্যদের গতি কমিয়ে দেওয়াই এসব তৎপরতার লক্ষ্য।  

আইন প্রয়োগ করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনী হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিত থাকা শুরু করেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে।

দেশটির নির্মাণ, কৃষি ও উৎপাদন খাতের অন্তত নয়টি ইউনিয়ন গণতন্ত্র ও অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে পুনর্বহালের দাবিতে ‘মিয়ানমারের সব লোককে’ কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে ইউনিয়নগুলো বলেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ অব্যাহত রাখার মধ্যে দিয়ে ‘মিয়ানমারের জনগণের শক্তিকে দমন করা’ সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করা হবে।

“এখনই সময় আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার,” বিবৃতিতে বলেছে তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার ইয়াঙ্গনে অল্প কিছু চায়ের দোকান ছাড়া আর সবকিছু বন্ধ ছিল। বড় সব বিপণিবিতানগুলো বন্ধ ছিল আর কারাখানাগুলোতেও কোনো কাজ হয়নি।

এদিন এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আগের দিন তারা ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

‘অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’ গোষ্ঠী জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ।

১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া বিক্ষোভ ও ধর্মঘট দমনে সামরিক বাহিনী ৫০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে বলে জাতিসংঘ গত সপ্তাহে জানিয়েছিল।